এম. বেদারুল আলম •
সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দাবি আদায়কে কেন্দ্র করে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ রবিবার থেকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন বেগবান করতে যাচ্ছে বেসরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে জেলার ৩ শতাধিক মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ থেকে তালা ঝুলিয়ে একাত্মতা জানাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারাটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল হাসান মানিক।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত জেলার ৩ শতাধিক মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের শ্রেনী কার্যক্রম বন্ধ থাকবে পাশাপাশি বিদ্যালয়ে তালা ঝুলবে। আমাদের একটাই দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। জেলায় উক্ত বিদ্যালয় সমূহে প্রায় তিন লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বর্তমানে অধ্যয়নরত। এতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা এবং একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানরত প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, একই কারিকুলামের অধীনে একই সিলেবাস, একাডেমিক সময়সূচি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক- কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে ‘পাহাড়সম বৈষম্য। বেতন বৈষম্যসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।
শিক্ষক সমিতির কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী বলেন- সরকারি এবং বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সপ্তম গ্রেডে বেতন দেওয়া হলেও পক্ষান্তরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ বেতন পান পঞ্চম গ্রেডে। এটি একটি বিশাল বৈষম্য বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরের টাকার জন্য অপেক্ষা করতে করতে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন।
অন্যদিকে কয়েক বছর যাবত কোনো প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট যাতে শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ দাবি তোলে তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল দাবি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল জাতীয়করন করা। বিগত অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে শিক্ষা বাজেটে বরাদ্দ কম দেয়ায় ১১ জুলাই থেকে ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলছে। শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি না মানলে আরো কেন্দ্রীয় ভাবে কঠোর কর্মসূচি আসছে।
এদিকে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে, শ্রেণিকার্যক্রম বন্ধ রেখে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন- বিষয়টি আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখেছি।
এ বিষয়ে এখনো উর্ধ্বতন মহল থেকে আমাদের জন্য কোন নির্দেশনা আসেনি। আশাকরি মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের দাবির বিষয়ে এবং শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রেখে এবং পাঠদান বন্ধ রেখে দাবি জানানোর বিষয়টি কতটুকু যৌক্তিক সে সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করবেন। অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। প্রতি বছরই তারা নানা কর্মসূচি দিয়ে থাকেন। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জাতীয় নির্বাচন আসতে আর বেশ দেরি নেই।
ফলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই দাবি অনেকটা গুরুত্ব বহন করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি দাবি আদায়ের সময় দীর্ঘ হয় শিক্ষার চরম ক্ষতি হবে।জেলার ৩ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন লক্ষ শিক্ষার্থী শিখন শিখন থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিষয়টি সরকারের গুরুত্ব বিবেচনার দাবি রাখে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-