ঈদের পরে আজ খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

কক্সবাজার জার্নাল.কম:

ছবি: ইন্টারনেট

ঈদের ছুটি শেষে আজ রবিবার খুলছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে গত সপ্তাহ থেকে কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা শুরু করেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারী রূপ নিচ্ছে। দুই সপ্তাহের দীর্ঘ ছুটিতে পরিচ্ছন্নতার অভাবে খেলার মাঠ, আশপাশ এলাকা, এমনকি খোদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তারের শঙ্কা আছে। এতে শিক্ষার্থীদের কেউ আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ জনস্বাস্থ্যবিদেরও।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোথাও যেন বৃষ্টির পানি না জমে। সে জন্য প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালাতে হবে। এটা নিয়মিত করলে লার্ভা জন্মে না। শিক্ষার্থীরা যাতে বাড়িতেও আক্রান্ত না হয়, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দিতে হবে, যাতে মশারি ব্যবহারসহ বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে এবং বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, খোলার আগে সবাইকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস উপযোগী করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে ২ হাজার ১৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী আছে। তাদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৭২ জন ও ঢাকার বাইরে ১১০ জন আক্রান্ত হন। এ সময় একজন মারা গেছেন। আর গত জানুয়ারি থেকে মারা গেছেন ৬৫ জন। এ ছাড়া শুক্রবার পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২ জন, চট্টগ্রামে ২৪৩, খুলনায় ৫৫, রাজশাহীতে ১৪, রংপুরে ৩৩, বরিশালে ৫২ ও সিলেটে ১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডেঙ্গু বিস্তারের বড় উৎস হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে ডেঙ্গুতে এই মৌসুমে এ মৃত্যুর ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোড়িত রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ইলমা জাহানের মৃত্যু। যদিও ঘটনাটি স্কুলে নয়, কিন্তু এর পরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগে দেখা দিয়েছে। কেননা শিক্ষার্থীরা একটা লম্বা সময়ের জন্য স্কুলে থাকে।

মাউশি মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু আর বন্যার ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টান্ডিং অর্ডার (সর্বদা পালনীয়) দেওয়া আছে। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন ঈদুল আজহায়ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাতিল করা হয়েছিল। তখনকার নির্দেশনাগুলোই পালন করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে কর্মচারী, স্কাউটস, বিএনসিসি ও শিক্ষার্থী সমন্বয়ে এক বা একাধিক টিম গঠন করতে হবে। ওই টিম ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম চালাবে। বিদ্যালয় ও আশপাশে যেসব জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমার আশঙ্কা থাকে, সেসব স্থান চিহ্নিত করে পরিষ্কার করবে; যেহেতু খোলা পাত্রে জমাট পানিতে ডেঙ্গু ডিম ছাড়ে। তাই বাথরুমের বদনা ও বালতি যাচাই করতে হবে। হাইকমোডে হারপিক ঢেলে ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে; বাথরুমের প্যানে হারপিক ঢেলে বস্তা বা অন্য কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে হবে; কোনো স্থানে জমাটবদ্ধ পানি থাকলে স্প্রে অথবা তা নিষ্কাশন করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আমিন জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্ট চালানোর লক্ষ্যে ঈদের ছুটির শুরুতেই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সুরক্ষার লক্ষ্যে ঈদের ছুটির আগে ও পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

আরও খবর