কক্সবাজারে হঠাৎ আইনশৃঙ্খলার অবনতি : বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, খুন

এম.বেদারুল আলম •

ফাইল ছবি

কক্সবাজারে হঠাৎ আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। খুন, ছিনতাই, চুরি যেন নিত্যদিনের ঘটনা। জেলার কোন না কোন উপজেলাতেই ঘটছে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের ঘটনা। পুলিশের দায়সারা ভাব নিয়ে প্রশ্ন সচেতন মহলের। হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শংকা বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি না হলে আইনশৃঙ্খলার আরো অবনতির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

গেল পক্ষ কালের মধ্যেই জেলায় পাঁচটি খুনের ঘটনা, অর্ধশতাধিক চুরি ছিনতাই এর ঘটনা ঘটেছে যদিও পুলিশের খাতায় সেই সংখ্যা নগণ্য। গেল দুইদিনে কক্সবাজার শহরে দুজন সাংবাদিকের বাসায় বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোন কিনারা করতে পারেনি। তাই জনমনে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের তৎপরতা নিয়েও। কোন পেশাজীবীই রেহায় পাচ্ছে না চোরের কবল থেকে। অবশ‍্য পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি তারা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে চোর সনাক্ত করতে।

খুরস্কুলে টমটম চালক, শহরের সমিতিপাড়ায় নবম শ্রেণির ছাত্রের লাশ, টেকনাফের পাহাড়ে অজ্ঞাতনামা লাশ, চকরিয়ায় কিশোরের লাশ উদ্ধারের রেশ না কাটতেই দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজারের সাংবাদিক জসিম উদ্দিনের ফ্ল্যাট বাসায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে।

ফ্ল্যাটের আলমারি ও সুকেস ভেঙে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। এক‌ই দিন আজকের পত্রিকার সাংবাদিক মাঈনউদ্দিন হাসান সাহেদের বাসায়‌ও দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকদের বাসায় একের পর এক চুরির ঘটনায় গভীর উদ্বেগে রয়েছে সাংবাদিকরা।

৪ জুলাই সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর মডের থানার এসআই সোহেল পৌরসভার আলীরজাঁহাল এলাকার সাংবাদিক জসিমের বাসা পরিদর্শন করেন। তবে এখনো পর্যন্ত চুরি হওয়া কোনো মালামাল উদ্ধার করতে পারেননি।

ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে আলীরজাঁহাল এলাকার একটি বহুতল ভবনের পাঁচতলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন তিনি। বাসায় তালা দিয়ে গত ঈদুল আযহার আগের দিন দুপুরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি থেকে তারা বাসায় ফিরেন। বাসায় ঢুকে শয়নকক্ষের পাশের বেলকনির গ্রিল ভাঙা ও স্টিলের আলমিরা ভাঙা দেখেন। কক্ষে থাকা জামা-কাপড়সহ অন্যান্য আসবাবপত্রও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। বিভিন্ন কক্ষে থাকা আলমারি, সুকেস ও ওয়্যারড্রোবসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায় চোরের দল।
জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কারণে আমরা বাসায় ছিলাম না। এই সময়ে চোরের দল ঘটনাটি ঘটিয়েছে। স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।

আজকের পত্রিকার কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি মাইনুদ্দিন হাসান সাহেদ জানান -আমি থাকি বইল্লাপাড়া প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন ফেরদৌস চেয়ারম্যানের ছোট ভাইয়ের ভাড়া বাসায়। ঈদুল আযহার ছুটিতে চোর ঢুকে দুটি ল্যাপটপ, গহনা সহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও অদ্যাবধি কাউকে আটক করতে পারেনি। আমি পুলিশকে ভিডিও ফুটেজ প্রেরণ করেছি। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি। পুলিশের যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে তা চোর সনাক্তকরণে যথেষ্ট নয়। ফলে মালামাল উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছি। পুলিশকে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

রামু ফতেখারকুলের বাসা থেকে গ্রীল কেটে মাছরাঙা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সুনীল বড়ুয়ার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া জানান, আমার টিভিএস রেডিয়ন মডেলের (কালার মেরুন) বাইকটি গত সোমবার রাতে বাড়ির উঠোন থেকে চুরি হয়েছে। চোরের দল বাউন্ডারীর দেয়াল টপকিয়ে বাড়ির উঠানে প্রবেশ করে গেইটের তালা কেটে গাড়ি বের করে নিয়ে যায়। গাড়িটি কয়েকমাস আগে কক্সবাজারের একটি শো রুম থেকে কিনেছেন তিনি। পুলিশের সহযোগিতা এবং তৎপরতা না থাকলে গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।

ঈদুল আযহার আগে জেলায় বেশ গরু ছাগল চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তেমন কাউকে আটক কিংবা গরু উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে দেখা দিয়েছে জনমনে প্রশ্ন। গতকাল ৫ জুলাই কলাতলির ডলফিন মোড়ে টমটম চালকের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ৫ নং ওয়ার্ডে ছাত্রলীগ কর্মীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অনেকে ঝামেলা এড়াতে থানা পুলিশের দ্বারস্থ কম হতে চাওয়ায় চুরির সঠিক পরিসংখ্যান জানাও সম্ভব হয়না।

আইন শৃংখলার অবনতি এবং পুলিশের ভুমিকা বিষয়ে জানার জন্য কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তিনি কল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

 

আরও খবর