কক্সবাজার জেলার বসছে ৯০টি কোরবানির হাট

এম. বেদারুল আলম :

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা সমাগত। আগামি ২৯ জুন এ কোরবানির ঈদ। ঈদের প্রধান কাজ সামর্থ অনুযায়ি পশু কোরবানি। জেলায় এবারের ঈদে ছোট-বড় ৯০টি কোরবানির হাট বসছে। এরমধ্যে ৪৮টি স্থায়ী হাট এবং ৪২টি বসছে শুধুমাত্র কোরবানের ঈদ উপলক্ষ্যে। বেসরকারি হিসাবে তা শতাধিক। বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা ও সর্বসাধারণের নিরাপত্তা বিবেচনায় এবার ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে পুলিশ।

এ ছাড়াও নেওয়া হয়েছে নানা প্রশমনমূলক কর্মসূচি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাজারে কোরবানের পশু পরীক্ষার জন্য প্রাণী সম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে পশু টেষ্ট মেডিকেল টিম। জাল নোট সনাক্তকরণে বাজারে থাকছে বিশেষ জালনোট সনাক্তকরণ মেশিন। ছিনতাইকারিদের দৌরাত্ব্য বন্ধে এবং ক্রেতা- বিক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশের বিশেষ টিম।

কোরবানের বাজারে নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (জেনারেল) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন “ কোরবানের পশুর হাটের নানা বিষয় নিয়ে প্রস্তুতি সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের র্নিবিঘ্নের জন্য প্রতিটি বাজারে নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

সর্বসাধারণ যাতে নির্বিঘ্নে বিকিবিকি করতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতিটি বাজারে পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করবে পাশাপাশি সাদা পোশাকে ও বিশেষ পুলিশ সদ্যরা আলাদাভাবে মোতায়েম থাকবে। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে পশু নিরোগ ও সঠিকতা যাছাই করতে দিক নিদের্শনা দেয়া হয়।

এ বছর জেলায় ৯০টি পশুর হাট বসছে যার মধ্যে সদরে ১৭টি, রামুতে ১৫টি, চকরিয়ায় ২০টি, পেকুয়ায় ৮টি, উখিয়ায় ৮টি, টেকনাফে ১৩টি,মহেশখালী ৯টি, কুতুবদিয়ায় ৬টি রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে বাজারের সংখ্যা শতাধিক বলে জানা গেছে। জেলার সর্বত্র বাজার বসলেও এখনো জমে উঠেনি বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান- সদরে ১৭টি কোরবানের পশুর হাট বসছে। এরমধ্যে স্থায়ী বাজার রয়েছে ৫টি। পৌরসভায় নতুন করে অনুমতি দেয়া হয়েছে ১টি।জেলার বৃহত্তম বাজারটি খরুলিয়া বাজার। গতবছর খাস কালেকশানে হলেও ্ বছর বাজারটি ইজারা হয়েছে। সরকার সদরের বাজার থেকে আশানুরুপ রাজস্ব আদায় করেছে।

সদরের সব বাজারের ইজারাদারদের জন্য শৃংখলা, নিরাপত্তা, ক্রেতা বিক্রেতাদেরজন্য সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশি বেষ্টনি থাকবে। জালনোট সনাক্ত করতে সোনালী ব্যাংকের আলাদা টিম থাকবে। সদরের ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তর পশুর হাট খরুলিয়া বাজার এ বছর ইজারা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় । এছাড়া সদরে বসছে ঈদগাহ বাজার ডাক হয়েছে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকায়। অন্যান্য বাজার হলো কালিরছড়া বাজার, পোকখালী মুসলিম বাজার, পিএমখালী জুমছড়ি বাজার।

এদিকে ঈদের বাজার জমতেই গত বুধবার খরুলিয়া বাজারে শতাধিক গরু বিক্রি হয়েছে। আগামি বুধবার নিয়মিত হাটবারের পাশাপাশি কোরবানের পশুর হাট। ইতোমধ্যে খরুলিয়া বাজারে ১ হাজারের মত গরু মহিষ বাজারে তোলার জন্য মজুদ রয়েছে। গতবছর গরুর সারি প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কজুড়ে ছিল। এ বছর প্রচুর গরু বাজারে সরবরাহ থাকলে ও মাঝারি মানের গরুর দাম বেশি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এদিকে আগামী সপ্তাহে গরু বিক্রি বাড়তে পারে সদরের ঈদগাঁও বাজার, পিএমখালীর জুমছড়ি বাজার, রামুর কলঘর বাজার , মিঠাছড়ির কাটির রাস্তা বাজার , উখিয়ার রুমখাঁ বাজারসহ প্রায় সবকটি বাজারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাজারে মায়ানমারের, ভারতের এবং দেশিয় প্রচুর গরু মজুদ করেছে বিক্রেতারা। যদিও শুরু থেকেই মায়ানমার ও ভারতের গরু প্রবেশ নিয়ে কড়াকড়ি ছিল।

হাট সমুহে ক্রেতা সাধারণের নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশি টহল জোরদারের পাশাপাশি নতুন করে সাজানো হয়েছে হাটসমুহকে। সকাল থেকে রাত অবধি যেন নির্বিঘ্নে বিকিকিনি করা যায় এজন্য সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি বাজারের ইজারাদার ।

এদিকে সদর উপজেলার তথা জেলার সর্ব বৃহৎ পশুর হাট খরুলিয়া বাজারসহ ৪টি হাটই সড়কের উপর হওয়ায় দূর্ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। খুরুস্কুল রাস্তার মাথার পৌরসভার কোরবানের পশুর হাটের পাশাপাশি কুতুবদিয়া পাড়ায় একটি হাটের অনুমোদন হতে পারে।

বৃহত্তম কোরবানের হাট খরুলিয়া বাজারের ইজারাদার মোঃ সরওয়ার জানান- আমরা ২ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বাজারটি ইজারা নিয়েছি। কিন্তু চকরিয়া থেকে ব্যবসায়িরা গরু নিয়ে কক্সবাজারে আসার পথে চকরিয়া ব্রীজের আগে একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট গরুর গাড়ি আটকিয়ে গণহারে চাঁদা আদায় করে। টাকা না দিলে গাইড় আটকে থাকে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এদিকে কোরবানির পশুরহাট ইজারার মাধ্যমে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলে ও বাজার সমূহের উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় হতাশ ইজারা গ্রহিতারা। ইজারাদার ও স্থানিয় ব্যবসায়িদের অভিযোগ – জেলার বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট খরুলিয়া বাজার প্রতি বছর সর্বোচ্চ টাকায় ইজারা হলেও বাজারটির উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। মহাসড়কের উপর প্রতি বছর বাজার বসে। ফলে ঈদুল আযহার সময় গরু কিনতে আসা অনেক লোক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়। বাজার বসার জন্য পর্যপ্ত জায়গা না থাকায় ইজারাদাররা নিরুপায় হয়ে সড়কের উপর পশুর হাট বসাতে বাধ্য হন বলে জানান। নির্মান করা হয়নি বিভিন্ন শেডের। প্রতি রবি ও বুধ বার সপ্তাহে ২ দিন নিযমিত পশুর হাট বসলেও ক্রেতা-বিক্রেতা চরম ঝুকি নিয়ে সড়কের উপর বিকিকিনি সারছে। সড়কের উপর বাজার বসার কারনে সড়কের উভয় পাশে মাটি সরে গিয়ে মহাসড়কের মারাত্বক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

অপরদিকে সদরের অপর বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট ঈদগাও বাজার ও এ বছর ঈদুল আযহায় ইজারা হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি। এ হাটটি ও মহাসড়কের উপর বসার কারনে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি তীব্র যানজট লেগেই থাকে।

খরুলিয়া ও ঈদগাও বাজারের ইজারাদাররা সড়ক দুর্ঘটনার কবল থেকে ক্রেতা, বিক্রেতা ও সাধারণ পথচারিদের রক্ষায় মহাসড়কের উপর থেকে সুবিধাজনক স্থানে কোরবানির পশুর হাট স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট।সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

আরও খবর