উখিয়া সংবাদদাতা:
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন উখিয়া রেঞ্জের সদর বিটের অঘোষিত বিট কর্মকর্তা এখন বনবিভাগের মিডিয়া খ্যাত কালা সোনা নামক এক ব্যাক্তি। তার কথায় চলে মাঠ পর্যায়ের সকল কার্যক্রম।
সূত্র জানায়, কালাসোনার অনুমতি মিললেই বনবিভাগের জায়গায় দালান করা,পাহাড় কর্তনসহ সবকিছু করা যাচ্ছে বাধাহীনভাবে। তবে এসব চলে টাকার কারসাজিতে। যার ভাগ যায় সাংবাদিক ও বনবিভাগের পেটে।
জানা যায়, উখিয়ার বনবিভাগের আওতাধীন শীলের ছড়া,শৈলার ডেবা, ধইল্লা ঘোনা, হাজম রোড, আদর্শ গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিযোগিতা দিয়ে দালান নির্মাণের মহোৎসব। পাহাড় খেকোদের নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাহাড় কাটা চলছে। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। কিন্তু লাভবান কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা।
সরজমিনে দেখা যায়, উখিয়ার ধইল্লা ঘোনা এলাকায় রাস্তার পাশ ঘেঁষে নতুন মসজিদ নামক মসজিদের সাথে লাগোয়া একটি বনবিভাগের জায়গায় বাউন্ডারি নির্মাণের কাজ চলমান।
এব্যাপারে জানতে বাড়ির মালিক আব্দুল মালেকের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে বলেন।
পরে মালেকের স্ত্রী খালেদা জানান, এখানে বাউন্ডারি হচ্ছে , সামনে একটা মার্কেট করবো এবং পিছনে বাড়ি করবো। এবিষয়ে কালাসোনা নামক এক ব্যাক্তিকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
পরবর্তীতে বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করলে আরও টাকা দিতে হবে বলে জানান তিনি। কালা সোনাকে কেন টাকা দিয়েছে সেটা জানতে চাইলে প্রতিবেদককে জানান, সে বিট কর্মকর্তাকে দেবে বলে নিয়েছে।
এব্যাপারে কালা সোনার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে, দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বনবিভাগের জায়গায় যাচ্ছেনা বলে জানালেও, সম্প্রতি একটি বনবিভাগের জায়গা থেকে টাকা নেয়ার কথা জানতে চাইলেই হুট করে ফোন কেটে দেন তিনি।
সূত্র জানায়, উখিয়া বিটের আওতাধীন বনবিভাগের জায়গায়, মাটি কাটা, বাড়ি নির্মাণ, বালি তুলা, দোকান নির্মাণ সহ যাবতীয় কাজের জন্য আগে কালাসোনা নামক ব্যাক্তিকে ম্যানেজ করতে হয়। তার কথা ছাড়া কোনো কাজ ই যেন হয়না। সরকার প্রতি বছর বছর সম্পদ রক্ষার্থে যে টাকা খরচ করতেছে সব টাকায় জলে যাচ্ছে এসব অসাধু কর্মীদের কারণে। এছাড়া কালাসোনার প্রভাবে তারই আপন ভাইয়েরা পাহাড় কাটছে।
বনবিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যদি সরেজমিনে এসে বনবিভাগের জায়গা পরিদর্শন করলে সব কিছুর প্রমাণ মিলবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি জানায়, আমাদের উখিয়ায় যেখানে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু সেখানেই কালা সোনা নামক ব্যাক্তি হাজির। বনবিভাগকে ম্যানেজ করার কথা বলে আদায় করে মোটা অংকের টাকা। এবং তাকে ম্যানেজ না করলে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোক এসে ডিস্টার্ব করে।
এদিকে বিগত ২-৩ মাস আগে একটি বাড়ি নির্মাণকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কালা সোনা নামক এই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, কালা সোনার সাথে উখিয়া রেঞ্জের সদর বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান, মুন্সি আওয়াল ও কালাম এই দুইজন কালা সোনার সকল কর্মকাণ্ডে জড়িত।
এব্যাপারে জানতে আওয়ালের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি সম্পুর্ণ অস্বীকার করেন তিনি।
অভিযুক্ত কালামের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), উখিয়ার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাহাড় প্রকৃতি ধ্বংস করে সরকারি জায়গায় বাড়ি ঘর নির্মাণ করছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে বনবিভাগকে আরও কঠোর হতে হবে, অন্যথায় উখিয়ার বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাবে, প্রকৃতি হারাবে তার অপরূপ সৌন্দর্য্য।
এব্যাপারে বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে অবগত না বলে জানান, এবং দুইদিনের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-