বিএনপির এক দফা চূড়ান্ত, ঘোষণা ঈদের পর

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের এক দফা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এর ভিত্তিতে ঈদুল আজহার পর লাগাতার কর্মসূচি দেবে দলটি। এ লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের পথনকশাও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক দফা চূড়ান্ত করা হয়।

গত সপ্তাহে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি দুটি বৈঠক করেছে। দুই বৈঠকের মাঝের সময়ে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া হয়। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে জানান, এক মঞ্চ থেকে এক দফার ঘোষণা আসছে না। যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জোট ও দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে একই দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, এক দফা বলা হলেও এতে একাধিক দাবি যুক্ত থাকবে। এই দফার লিখিত ঘোষণায় বলা হয়েছে ‘সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করার ঘোষণা প্রদান করছি।’

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন নতুন ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি আরো আগে শুরু করা দরকার ছিল বলে মত দিয়েছেন কমিটির কয়েকজন সদস্য। তারা ঈদের আগে এক দফার ঘোষণা দেওয়ার পক্ষে মত দেন।
তবে বেশির ভাগ নেতা বলেছেন, ঈদের আগে এক দফা ঘোষণা দেওয়া হলে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু হতে পারে। ঈদের কারণে কর্মসূচি বন্ধ থাকায় আন্দোলনে ছন্দঃপতন হবে। পরে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ঈদের পর এক দফার ভিত্তিতে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খুব শিগগির এক দফা ঘোষণা আসবে। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন শুরু হবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি রাজধানীতে বড় সমাবেশের মাধ্যমে এক দফার ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কর্মসূচির ধরন কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আন্দোলনে যুক্ত শরিক দল, বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী, দলের জেলা-মহানগর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। তবে নেতারা মনে করেন, মার্কিন ভিসানীতির পর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ার বাস্তবতা নেই। আর এ ধরনের কর্মসূচি এখন রাজনীতিতে গুরুত্বও পায় না। বরং মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়।

তত্ত্বাবধায়কের যৌক্তিকতা নিয়ে সেমিনার ২১ জুন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আগামী ২১ জুন রাজধানীতে তত্ত্বাবধায়কের সরকারের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে একটি সেমিনার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, বিচারপতি খায়রুল হকের সংক্ষিপ্ত রায় এবং কোন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকার তা বাতিল করল এবং এখনো কেন নির্বাচনকালে এ ধরনের সরকার দরকার তা তুলে ধরা হবে।

মূলত এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার আগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টিকে আবার সামনে আনতে চাইছে বিএনপি। সে জন্যই এই সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, সেমিনারে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা, সুধীসমাজের প্রতিনিধি ও পেশাজীবী নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ ঘোষণা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পথে : রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার পর কী ধরনের সংস্কার করা হবে তার ভিত্তি হিসেবে রাষ্ট্র মেরামতের ‘যৌথ রূপরেখা’ ঘোষণা চূড়ান্ত হওয়ার পথে বলে জানিয়েছে বিএনপির সূত্র। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের মতবিরোধ আছে।

স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, যে তিনটি দফা নিয়ে দুই পক্ষের আপত্তি ছিল তার সমাধান হয়ে গেছে। শুধু শব্দগত কিছু পরিবর্তন হতে পারে। ফলে এক দফা ঘোষণার আগে-পরে রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ ঘোষণাও আসতে পারে।

আরও খবর