ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিওতে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও সাম্প্রদায়িকতা: স্থানীয়দের ছাঁটাই, মূলহোতা প্রদীপ

বিশেষ প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের ওয়ার্ল্ড ভিশন নামক এনজিওর কথিত কর্মকর্তা ক্যাশ কোর্ডিনেটর প্রদীপ কুমার সুতারের বিরুদ্ধে গুরুত্বর অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ ওঠেছে।

চলতি বছরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত চলমান এসএনএসপি-ভলেন্টিয়ার সার্ভিসেস প্রকল্প থেকে স্থানীয় কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়।যারা সকলে মুসলিম ও স্থানীয় বাসিন্দা।চাকরিচ্যুত কর্মীদের অভিযোগ কথিত প্রদীপ কুমার সুতারের সাম্প্রদায়িকতা ও স্বজনপ্রীতির কারনে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

চাকরীচ্যুত একজন কর্মী জানান, এসএনএসপি-ভলেন্টিয়ার সার্ভিসেস প্রকল্পে সংখ্যাগরিষ্ঠ বহিরাগত ও অন্য ধর্মাবলম্বীর থাকলেও কথিত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার স্বজনপ্রীতি ও সাম্প্রদায়িকতা করে নিজের আত্বীয়-স্বজনদের বহাল রেখে যোগ্যতা সম্পন্ন স্থানীয় ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের চাকুরীচ্যুত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ল্ড ভিশনে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, এসএনএসপি-ভলেন্টিয়ার সার্ভিসেস প্রকল্পের ৩য় ধাপের কার্যক্রম শুরুর হওয়ার আগে প্রজেক্ট অফিসার পদে প্রার্থীদের ভাইভা গ্রহনের দিন প্রদীপ কুমার ছুটিতে ছিলেন।কিন্তু, সেদিন প্রকল্প ব্যবস্থাপক তপন কুমারকে ভাইভা বোর্ড থেকে সরিয়ে নিজে ভাইভা বোর্ডে পরীক্ষক ছিলেন।

ফলশ্রুতিতে, দুঃসম্পর্কের নিজের ভাইরা ভাই নির্মল কুমার দত্তকে প্রজেক্ট অফিসার করে এবং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা সম্পন্ন সিনিয়র কর্মীদের ছাঁটাই করে।যা সম্পূর্ণ স্বজনপ্রীতি ও সাম্প্রদায়িকতার শামিল।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প দেখভালের দায়িত্ব প্রকল্প ব্যবস্থাপকের।কিন্তু প্রকল্প ব্যবস্থাপককে সরিয়ে ক্যাশ কোর্ডিনেটর পদে কর্মরত প্রদীপ কুমার ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও ভাইভা বোর্ডে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে গুরুত্বর যে অনিয়ম করছে তা আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য বড্ড বেমানান অপেশাদারিত্ব বলে জানান এই কর্মকর্তা।

চাকরি থেকে ইস্তেফা দেওয়া ওয়ার্ল্ড ভিশনের সাবেক একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রদীপ কুমার সুতার কর্মীদের কথায় কথায় গালি গালাজ করেন, মেয়েদের দুর্ব্যবহার করেন এবং চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন।নিজেকে রেসপন্স ডিরেক্টর ফ্র্যাদরিক ক্রিস্টোফার এবং পিপলস এবং কালচারাল ম্যানেজারের ডিউক সব্যচাচীর লোক বলে দাবী করেন।নিজের সীমাবদ্ধ দায়িত্ব ছাড়াও অন্যের দায়িত্বেও নাক গলান তিনি।তার কারনে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মী চাকরী থেকে ইস্তেফা দিয়েছেন আবার অনেকে তার রোষানলে চাকরিচ্যুত হয়েছে।

এদিকে, সরেজমিন পর্যবেক্ষণে এসএনএসপি-ভলেন্টিয়ার সার্ভিসেস প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়।উক্ত প্রকল্পের ২য় ধাপের কার্যক্রমে ক্যাম্প ইনচার্জকে ফাঁকি দিয়ে অনুমতি ছাড়া নিজেদের মনগড়া কার্যক্রম বাস্তাবায়ন করে।ক্যাম্প ২০ এবং ২০ এক্সটেনশনে ক্যাম্প ইনচার্জ এবং আরআরআরসি প্রয়োজন সহায়ক চিঠিতে ৫০০ জন ভলেন্টিয়ার নিয়ে কাজ করার অনুমতি দিলেও উক্ত প্রকল্পের অসাধু কর্মকর্তা ক্যাম্প ইনচার্জ এবং আরআরআরসিকে না জানিয়ে ৬০০ জন ভলেন্টিয়ার নিয়ে কাজ করে।

এছাড়া, ক্যাম্প ১২তে ৩০০ জনের পরিবর্তে ৩৫০ জন,ক্যাম্প ১৮তে ৪০০ জনের পরিবর্তে ৪৫০ জন ভলেন্টিয়ার নিয়ে কাজ করে।যা এক ধরনের ক্যাম্প কতৃপক্ষ আরআরআরসি এবং বাংলাদেশ সরকারকে তোয়াক্কা না করার শামিল।

এছাড়া, উক্ত প্রকল্পের কার্যক্রমগুলো কাগজে-কলমে লিপিবদ্ধ থাকলেও মাঠপর্যায়ে সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেও অভিযোগ ওঠেছে।প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট আব্দুর রহমান নামের একজন ভলেন্টিয়ার জানান, দৈনিক ২৫০ টাকার বিনিময়ে ৫ ঘন্টা করে কাজ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তেমন কোন কাজ করতে হয় না।প্রতিদিন উপস্থিতি সাক্ষর করলে হয়, অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য নিজে উপস্থিত হতে না পারলেও জমা দেওয়া স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি দিয়েও উপস্থিতি নিশ্চিয়তা করা যায়।তিনি আরও বলেন, উক্ত প্রকল্পের সাথে জড়িত অনেক ভলেন্টিয়ারের নাম কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ থাকলেও তারা বিভিন্ন কাজকর্মে জড়িত, অনেকে শিবিরের বাহিরে গিয়ে কাজ করে।প্রতি মাসে নগদ টাকা প্রদানের সময় উপস্থিত থাকলে হয়।

স্থানীয় সচেতন মহলদের দাবী, কতগুলো এনজিও সংস্থান এইসব বায়বীয় প্রকল্পের মাধ্যমে শিবিরগুলোতে প্রতি মাসে কোটি কোটি নগদ টাকা বিতরনের কারনে ক্যাম্পে উচ্ছৃঙ্খলা এবং অস্থিরতা বাড়ছে।

এ বিষয়ে প্রদীপ কুমার সুতারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কমিউনিকেশন ম্যানেজার জর্জ সরকারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।

উক্ত সংস্থার যোগাযোগ প্রতিনিধি জর্জ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়টি ভিত্তিহীন বলেন।

অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরনার্থী কমিশনার শামশুদৌজ্জা বলেন, যে সব সংস্থা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।অতীতে আমরা অনেক সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।এই বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পাই নি।লিখিত অভিযোগ ফেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

আরও খবর