বিশেষ প্রতিবেদক •
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে অল্প দিনের ব্যবধানে দেখা মিলছে অসংখ্য কোটিপতি। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাই এমন ব্যাক্তিও বর্তমান সময়ে দেখা যায় কোটিপতির তালিকায়। শুধু তাই নই যারা উখিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানিতে অল্প বেতনের চাকরীতে কর্মরত ছিলেন বিগত কয়েকবছরের ব্যবধানে তারাও বনে গেছে লাখ লাখ টাকার মালিক।
তারা এমন কি আলাউদিনের চেরাগ পেলো..?
এমন প্রশ্নে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে তাদের অবৈধ কালোবাজার ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতার তথ্য।
২০১৭ সালে মায়ানমার কর্তৃক নির্যাতিত রোহিঙ্গা ঢল নেমে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কুতুপালং শিবিরে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি হওয়াতে তাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে কিছুটা অসম্ভব হয়ে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এর সুবাধে রোহিঙ্গারা অবাধ বিচরণ করেন স্থানীয় লোকালয়ে। এতে জড়িয়ে পড়ে তারা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে।
তাদের অপরাধ কর্মকান্ডের পশ্রয় দিয়ে গুটিকয়েক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে মায়ানমার থেকে অবৈধ পথে চোরাইমাল ও মাদক পাচার করিয়ে শুরু করে অবৈধ কালোবাজার ও মাদক ব্যবসা। এর সাথে জড়িয়ে পড়ে কুতুপালংয়ের অসংখ্য মানুষ। তৎসময়ে স্থানীয় কিছু যুবক বাহিরে চাকরী ছেড়ে এলাকায় এসে নেমে পড়েন রোহিঙ্গাদের সাথে এসব ব্যবসায়।
এসব ব্যবসায় কিছুসংখ্যক মানুষ প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লেও অসংখ্য মানুষ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে মায়ানমার থেকে অবৈধ চোরাইপন্য ও মাদক পাচার করে রাতারাতি বনে যায় কোটিপতি।
এদের মধ্যে এখনো গুটিকয়েক ব্যাক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকলেই বর্তমান সময়ে এসে এসব অবৈধ কালোবাজারি ব্যাবসায় সফল হওয়া কিছু ব্যাক্তির তথ্য ফাঁস হয়েছে।
*দোকান কর্মচারী থেকে কোটিপতি
সম্প্রতি মায়ানমারের বিভিন্ন ব্রান্ডের চায়নায় তৈরী বিবিধ নমুনার সিগারেটে চালান সিন্ডিকেট প্রধান কুতুপালংয়ের মোহাম্মদ শরিফের পুত্র শাহা জালালের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তার দৈনিক ইনকাম লাখ লাখ টাকা। গেল কয়েক বছর আগেও উখিয়া বন্ধন ইলেকট্রনিক নামে একটি প্রতিষ্ঠানে সামান্য বেতনে চাকরীরত ছিল এই শাহজালাল। বর্তমানে অবৈধ পথে সফল হয়ে কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
গেল সাপ্তাহ দেড় এক আগে শাহাজালালের শালাবাবু সাইফুলের মজুতকৃত ২৭লক্ষ টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ করতে ধাওয়া করে আইনশৃংখলা বাহিনী। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাতে পারলেও সেই সিগারেট উত্তর পুকুরিয়ায় পাবলিকে গনহারে ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে তমুল গন্ডগোল সৃষ্টি হয়।
*মুদির দোকান থেকে কোটিপতি
জানা যায়, কুতুপালং বাজারে মুদির দোকান রুবেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী যুবদল ক্যাডার মুহাম্মদ রুবেল ও তার ছোট ভাই ঈসমাইল তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈধ ব্যবসার আড়ালে মায়ানমারের চোরাইপন্যে সিগারেট, রিচ-কপি,ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন অবৈধ কালোবাজারির ব্যবসা করে বর্তমানে কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। এসবের সত্যতা পেয়ে অভিযান পরিচালনা করেন উখিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমদ। ধরা পড়ে জরিমানা গুনেন তারা।
গেল ৬ এপ্রিল ২৩ইং তাদের বিরুদ্ধে এসব তথ্যের সত্যতা নিয়ে বিভিন্ন গন্যমাধ্যম ও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ইতিপূর্বে তাদের দোকানে জাল স্ট্যাম্প পাওয়ার কারণে ঈসমাইলকে এক মাসের সাজা প্রদান করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি তাদের কর্মযজ্ঞ।
* সামান্য ড্রাইভার থেকে কোটিপতি
কুতুপালং পশ্চিম পাড়া এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে সামান্য ড্রাইভার থেকে লাখ লাখ টাকার বনে গেছে। ড্রাইভারির আড়ালে তিনিও চোরাকারবারির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পদ। এসব চোরাচালানের জন্য র্যাব তাকে জেরা করতে র্যাব কার্যালয়েও নিয়েছিলেন। বর্তমানে তার কোন দৃশ্যমান ব্যবসা নেই। অথচ ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতেছে। অন্যদিকে ডাম্পার গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ির মালিক ও তিনি। বিগত কয়েকবছর আগেও তিনি অন্যজনের গাড়ি চালিয়ে রোজগার করতেন।
* রোহিঙ্গাদের সাথে আঁতাত করে চোরাপন্যের ব্যবসায় কোটিপতি
কুতুপালং এলাকার মো: রশিদের ছেলে সাদ্দাম হোসেন তিনি এক রোহিঙ্গার সাথে আতাত করে পার্টনার হয়ে ব্যবসা শুরু করেন মায়ানমারের অবৈধ চোরাইপন্য সিগারেট, ক্যালসিয়াম,রি-চ কপিসহ অসংখ্য পন্যের। এসব পন্য তারা চোরাইপথে এনে উখিয়ার বিভিন্ন জায়াগায় সাপ্লাই দিতেন। বালুখালী ও কুতুপালং তারা নিজস্ব মুদির দোকান ও খোলে বসেন। বছর দেড়এক আগে বালুখালীতে গনহারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুড়ার ঘটনায় সাদ্দাম ও অই রোহিঙ্গার দোকান পড়ে প্রায় কোটি টাকার উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তারপরও তাদের কোন সংকট দেখা দেয়নি। পরে তারা আবার পুণরায় তাদের নিয়মে ব্যবসা শুরু করে বর্তমানে কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
স্থানীয় মান্যগণ্য ও সুশীলদের মতে, তাদের বিরুদ্ধে আয়ের উৎসের হিসাব চেয়ে অনেকের কাছে দুর্নীতি দমন কমিশনের চিঠিও পাটিয়েছিলেন। তারা সব জায়গায় টাকার জোরে বেঁচে যাচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, তারা বৈধ করুক বা অবৈধ করুক কিন্তু এসব গোয়েন্দা নজরদারি ছাড়া তাদের ধরার সাধ্য কারো নেই। কারণ তারা এসব বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এসব অবৈধ কালোবাজারির ব্যবসা করেন।
এ নিয়ে সাধারণ আমজনতার দাবি, নব্য কোটিপতিদের আয়ের উৎস খতিয়ে দেখা হউক। তারা অল্প দিনে কিভাবে এত টাকার মালিক বনে গেল।
এদিকে প্রশাসনের একাদিক সুত্র বলছে, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ পাওয়া যায় সেগুলা মুখিক আর পত্র-পত্রিকায়। কিন্তু সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। সঠিক তথ্য-উপাত্তের প্রমাণ ছাড়া প্রশাসন আসলে কাউকে কিছু করতে পারে না। তারপরও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে সজাগ রয়েছে।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন- ১
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-