নিজস্ব প্রতিবেদক •
কক্সবাজার জেলায় কর্মরত “হোপ ফাউন্ডেশন” নামক এনজিও সংস্থাটি স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও ভেতরে ভেতরে যে দূর্নীতির শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করছে তা উঠে এসেছে সম্প্রতি। সংস্থাটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গিয়ে এমনই ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এ সংস্থাটির কর্ম এলাকা কক্সবাজার জেলায় গতো ৭ বছরে ধরে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে ব্যাপক প্রসারে কাজ শুরু করে তারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক হাসপাতাল গড়ে তুলে বিদেশী দাতা গোষ্ঠীর আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে শুরু করে দূর্নীতি।
সংস্থার কর্ম পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি সংস্থার শীর্ষ স্থানীয় কর্তা ব্যক্তিরা শুরু করে নিয়োগ বাণিজ্য সহ, ঔষধ পত্র ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার নামে লুটপাট।
সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামানের বাড়ী সিরাজগঞ্জ হওয়ায় ঐ এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয় গন্ডায় গন্ডায় লোকজন। আর নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্টানটির বিভিন্ন স্থরে। অথচ সরকারী প্রজ্ঞাপনে সরাসরি উল্লেখ ছিলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ অত্র এলাকায় স্থানীয়দের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামান তার বিন্দুমাত্র কর্নপাত না করে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনাকে সম্পুর্ন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক লোক নিয়োগ দিতে থাকে নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জ থেকে এনে। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বয়ং তার কাজের বুয়াও বাদ পড়েনি। লোক দেখানো স্থানীয়দের চকরীর নামে নিম্ন লেভেলের পোস্ট আর সিরাজগঞ্জের লোকদের উচ্চ পর্যায়ের এসি রুমের চেয়ারে বসানো পোস্ট। সেখানেই স্পষ্ট হয় যে এলাকাসহ অন্য অঞ্চলের এসব লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অংকের উৎকোচ নেয়ার দৃশ্য। এসব নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুললে চাকরী হতে ছাঁটাই ও বিভিন্ন হুমকিও দেন এমন অভিযোগ ও এসেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
বিশ্বস্থ সুত্রে জানা গেছে জাহিদুজ্জামানের রয়েছে নিজস্ব কর্মী বাহিনী, নিজস্ব সিন্ডিকেট। তার এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে হোপ ফাউন্ডেশনের আয়া থেকে শুরু করে একাউন্টেন্ট এমনকি সিনিয়র অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী । তার বিশ্বস্থ কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত এই সিন্ডিকেটের সাহায্যে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, ঔষধ ও মালামাল ক্রয়ের নামে কোটি কোটি আত্মসাৎ করে আসছে। মধুরছড়া হাসপাতালে ওষুধ ফ্রি দেওয়ার কথা থাকলেও রোগীরা পর্যাপ্ত ওষুধ না পেয়ে বাহির থেকে কিনে সেবন করেন। তাছাড়া কোন স্টাপকে যদি চা-খরচা দেন তাইলে ওষুধ পান রোগীরা।
সুশীলদের প্রশ্ন মধুরছড়া হাসপাতালে এত ওষুধ কিনার বিল ভাউচার কেন হয় যদি হাসপাতালে ওষুধ না থাকে। সবচেয়ে স্পর্ষকাতর বিষয় যেটি তা হলো হোপ ফাউন্ডেশনের হিসাব বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা আরিফের সহযোগিতায় সংস্থায় কর্মরত কর্মচারীদের ৩/৪ মাসের বেতন ভাতা না দিয়ে তা ব্যাংকে জমা রেখে উনি ঐ টাকার একটি লভ্যাংশ ব্যাংক থেকে নিয়ে নিজের আখের গোছাচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, দাতা সংস্থা ইউএনএফপি এর দেয়া মোটা অংকের ডোনেশনের টাকার যে পরিমাণ বেতন কর্মচারীদের জন্য আইএনজিও কতৃক ধার্য করা তার অর্ধেক বেতন ও কর্মচারীদের না দিয়ে তা থেকেও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে এ সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
ভুয়া, বিল ভাউচার, কর্মচারীর বেতনের কাগজপত্রসহ প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে রয়েছে চরম দূর্নীতির অভিযোগ। সুত্রে এমন ও অভিযোগ পাওয়া গেছে, একজন ৩৫ হাজার টাকার বেতন ভুক্ত কর্মচারীর বেতন ২০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সংস্থার কাছে দেখানো হয় তার নামে ৩৫ হাজার টাকা বেতন দেয়ার কাগজ। শুধু এসব নয় তার পুরো সিন্ডিকেট গ্রুপ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে হোপ ফাউন্ডেশনের সমস্ত কার্যক্রম।
সংস্থার মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত দূর্নীতির ও অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। স্বগোত্রীয় কর্মচারী ছাড়া একটি টাকার মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছাড় দেননা তিনি।
হোপ ফাউন্ডেশনের মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে তিনি তার একনিষ্ঠ ঢাকা ভিত্তিক একটি কোম্পানি BLBE MART ছাড়া কোন কোম্পানির কাছ থেকে কোন প্রকার মালামাল ক্রয় করেন না।
অভিযোগ পাওয়া গেছে এই কোম্পানীর কাছ থেকে তিনি মোটা অংকের কমিশনের মাধ্যমে খুবই নিন্মমানের মালামাল ক্রয় করেন।
এদিকে সরকার কতৃক বিদেশী বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রদত্ত অর্থের অর্ধেক হোষ্ট কমিউনিটির জন্য বরাদ্ধ দেয়ার কথা থাকলেও চরম দূর্যোগে ও স্থানীয়দের একটি টাকার ও সহায়তা দেয়নি সংস্থাটি।
বরঞ্চ সরকারের এসব নীতিমালার প্রতি সম্পুর্ন বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন পূর্বক এসব টাকা দিয়ে কক্সবাজারের চেইন্দাতে গড়ে তোলা হয়েছে মা ও শিশু হাসপাতাল সহ ফিষ্টুলা সেন্টার নামে সুউচ্চ ব্যক্তিগত সম্পদ। যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
এ সামগ্রীক বিষয়াদি নিয়ে হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামান বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি ৫ বছর যাবৎ এই সংস্থায় সফল হতে পেরে আমার বিরুদ্ধে কে বা কারা এসব ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার চেইন্দা যে ফিষ্টুলা সেন্টার রয়েছে সেটি হোপ ফাউন্ডেশনের দাতা সংস্থার টাকায় নয়, এটি সম্পূর্ণ ব্যাক্তি মালিকানাধীন। সেখানে সমর্থ অনুযায়ী রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-