উখিয়ায় ছয় বছরেও শুরুই হয়নি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া •


দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীরগতি। প্রকল্পের মেয়াদের প্রায় ছয় বছরেও এখনো কাজ শুরুই করেনি উখিয়াতে মসজিদ নির্মাণের কাজ। এই অবস্থায় প্রকল্পটির ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

জানা যায়, এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কেন্দ্রের কাজ শেষে উদ্ভোধন করা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে উখিয়ায় মডেল মসজিদের কাজ শুরু হয়নি তা এখনো অজানা। মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পের সুষ্ঠু ও যথাযথ, বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এছাড়া জটিলতার কারণে নির্ধারিত মেয়াদে কোনো মসজিদ নির্মাণ করা সম্ভব না হলে, তা অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প সমাপ্ত করা যেতে পারে।

সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটিতে চাহিদা মতো অর্থ বরাদ্ধ পাওয়া না পাওয়ায় উখিয়াতে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে বর্ধিত মেয়াদে আগামী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে যে কোন সময়ে মসজিদের কাজ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনীর ব্যয় কিছুটা কমিয়ে ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। তবে আবার ৭১৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের এপ্রিল হতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর ৯ মাস ধরা হয়েছিল। এরপর প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। এতেও বাস্তবায়নের গতি না আসায় ৩ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোট যাচ্ছে ৭ বছর ৩ মাস।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবনায় বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য ১৯৭৫ সালের ২ মার্চ এক অধ্যাদেশ বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।

গত ৪৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশব্যাপী ইসলামের প্রচার প্রসারের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী ইসলামীক ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। মুসলিম নারী ও পুরুষদের নামাজ আদায়ের সুবিধাদি বৃদ্ধির জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধাসহ ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃদিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি আরব সরকারের অর্থায়নে মোট ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের এপ্রিল হতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ার প্রায় এক বছর পার হলেও বৈদেশিক সাহায্যে প্রাপ্তির বিষষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধধনী প্রস্তাব করা হয়।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংকৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করে মসজিদের নামাজ আদায়, সামাজিক সচেতনতা, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া ইসললামের মৌলিক বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম, মুসলমানদের ইসলামিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা উন্নয়নের জন্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সমাজে অশিক্ষা, নারী নির্যাতন, যৌতুক, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের যে প্রভাব রয়েছে তা দূর করার জন্য এ প্রকল্পটি নেয়া হয়।

অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের ইসলামিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা উন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়, প্রকর্পৈর প্রথমে সংশোধিত মেয়াদ ২০১৭ সালের এপ্রিল হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। এই সময়ের মধ্যে ৫০টি মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে উদ্ভোধন করা হয়েছে। সেই সময়কালে ৩৭০টি মসজিদের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন ছিল। অবশিষ্ট ১৪০টি মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। রেইট শিডিউল পরিবর্তনের জন্য নির্মাণ খাতের ব্যয় বৃদ্ধি প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে নির্মাণ কাজের ব্যয় প্রাক্কলন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের রেইট শিডিউল অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালের রেইট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন করায় প্রকল্পের নির্মাণকাজের প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ৭ হাজার ৪১৪ কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকার স্থলে ৮ হাজার ৬৫৫ কোটি৬৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা হয়েছে।

আরও খবর