কক্সবাজারে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের তিন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর ৩ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী ১০টি বই, ২৯টি লিফলেট, ১টি ডায়েরি, ২টি মাদরাসার পরিচয়পত্র, ২টি এনআইডি, ২টি মোবাইল ফোন ও ৪ হাজার ৫৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাতে এ অভিযান চালানো হয়।

শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কক্সবাজার র‌্যাব -১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতাররা হলেন, জামালপুরের ইসলামপুর এলাকার আব্দুল ওহাবের ছেল মো. জাকারিয়া মন্ডল (১৯), ভোলার মো. নুরুল আমিনের ছেলে মো. নিয়ামত উল্লাহ (২১) ও ফেনী সোনাগাজীর ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. ওজায়ের (১৯)। র‌্যাবের দাবি এ তিনজনই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সক্রিয় সদস্য।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এবং র‍্যাব-৭ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে চৌফলদন্ডি এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় এসব বই ও অন্যান্য মালামালসহ এ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঈদের ছুটিতে মাদরাসা বন্ধ থাকায় আটকরা বাড়িতে আসেন। ছুটি শেষে পুনরায় মাদরাসায় যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু মাদরাসায় না গিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা এবং বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের জন্য গোপন বৈঠক করার জন্য কক্সবাজারে একত্র হয়েছিল। বৈঠকের সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সক্রিয় সদস্য এবং তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ যোগদান কথা স্বীকার করেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের মুখে আনসার আল ইসলাম এর কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। এ সংগঠনের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হওয়ায় তারা ‘আনসার আল ইসলাম’ মতাদর্শী ‘আস-শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রুপ গঠন করে সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে এ সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে। এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৮৫ থেকে ১০০ জন। এটির উদ্ভাবক হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন। এ গ্রুপটির বাংলাদেশের আঞ্চলিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিলেন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ইসমাইল হোসেন। এ গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে এ সংগঠনে যোগদান করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার উগ্রবাদী করে তুলতো।

এ উদ্দেশে সংগঠনের সদস্যদের বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম ও বিপ গ্রুপের মাধ্যমে সরবরাহ করতো। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তারা ধর্মীয় স্থাপনা, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা করতো। গ্রেপ্তাররা তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো এবং সংগঠনের সব প্রকার নির্দেশনা এ অ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে বলে র‌্যাব দাবি করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব আরও জানায়, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় অনেক সদস্য গ্রেপ্তার হয়। যে কারণে সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন করে রিক্রুটিং শুরু করে। উঠতি বয়সী কিশোরদের অপব্যাখা দিয়ে, সহজে ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমে ভুলপথে নেওয়া যায় বিধায় কোমলমতি কিশোরদের তারা প্রথমে টার্গেট করতো।

তাই এ সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যই ১৯-২০ বছর বয়সী তরুণ এবং মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষক। সাধারণ লেখাপড়ায় শিক্ষিত উগ্র মনোভাবাপন্ন লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশ বিরোধিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। এ সংগঠনে মাদরাসা শিক্ষক সদস্যরা অত্যন্ত সুকৌশলে মাদরাসা পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করতো। এ জন্য তারা সংগঠনের সদস্যদের গোপনে শারীরিক প্রশিক্ষণ দিত।

তারা বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন উগ্রবাদী গ্রুপে তাদের বিচরণ ছিল। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র‌্যাব।