শিশুকে সফলভাবে দুগ্ধপানের উপায়


পহেলা আগষ্ট থেকে সপ্তাহব্যাপী মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “মাতৃদুগ্ধ দানে সহায়তা করুন স্বাস্থ্যকর পৃথিবী গড়ুন।”

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কৃষি নির্ভর হওয়ায় আমাদের দেশে পূর্ণ ২বছর দুগ্ধপান করা হয়ে থাকে তবে ইদানিংকালে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে মাতৃদুগ্ধের চেয়ে ‌ফর্মূলা দুধের প্রতি বেশী ঝুঁকছে সবাই। কর্মজীবি মায়েরা দীর্ঘক্ষন কর্মস্থলে থাকার কারণে শিশুদের দুগ্ধপান করাতে পারেননা এছাড়া কর্মস্থলে কোন ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার না থাকায় মায়েরা শিশুদের দুগ্ধপান করাতে পারেননা। এই বিড়ম্বনা এড়াতে বিকল্প দুধের সন্ধানে মায়েরা। অনেক মায়েরা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন না আমরা সাধারণত মা’কে না খাওয়াইয়া শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করি।অথচ ৬মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া একফোঁটা পানি পর্যন্ত খাওয়ানে যাবেনা তবে ৬মাস পর থেকে আস্তে বাড়তি খাবার দিতে হবে।

অনেকে আবার শারীরিক গঠন নষ্ট হবে বা ইত্যাদি অনুষঙ্গ বিবেচনায় স্তন্যদান থেকে বিরত থাকেন যেটা অনুচিত বরঞ্চ স্তন্যদানে জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এব মাতৃ বাৎসল্য নিশ্চিত হয়।শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশ দ্রুত হয়। তদুপরি বিভিন্ন ধর্মে শিশুদের দুগ্ধ প্রদানে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যেমন ইসলাম ধর্মে সন্তানের ২বছর পুর্ণ দুগ্ধপান করানো ফরয বা অবশ্যক করা হয়েছে। সম্প্রতি মিল্ক ব্যাংক তৈরির উদ্দ্যেগ নেয়া হয়েছে এটি অবশ্যই মাতৃদুগ্ধ নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।তবে যে মায়েরা দুধ দান করবেন এবং যে শিশুরা দুগ্ধপান করবে তাদের নাম ঠিকানা লিখে রাখতে হবে।ইসলাম ধর্মমতে দুধ ভাইবোনের বিবাহ করা হারাম। মহানবী সাঃদুধ মাতাকে নিজের মায়ের মত সম্মান দিয়েছিলেন।

তবে এটি সত্যি যে আমাদের অনেক মায়েরা সঠিক পদ্ধতিতে দুগ্ধ পান করাতে জানেনা। যার কারণে শিশুর EBF(এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং) হয়ে উঠেনা এতে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হয়না। শিশুকে সঠিক অবস্থান ও সংস্থাপনের মাধ্যমে মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করা জরুরি। আসুন জেনে নিই কিভাবে স্তন্যদান করবেঃ
অবস্থনঃ শিশু কে দুধ খাওয়ানার সময় মা ও শিশুর আরামদায়কভাবে বসা বা শোয়া ও শিশুকে ধরে রাখা বোঝায়।

*সংস্থাপনঃ শিশুর মুখ সঠিকভাবে মায়ের স্তনে লেগে থাকা বোঝায়।

অবস্থান ও সংস্থাপন একমাত্র পদ্ধতি শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর। কারণ-

১। এটি মায়ের দুধ পান করানোর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কারণ মায়ের দুধ জমা থাকে স্তনের বোটার চারপাশের কালো অংশে যাকে এরিওলা বলে।

২। শুধুমাত্র এই পদ্ধতিতেই শিশু অল্প পরিশ্রমে ও অল্প সময়ে বেশি দুধ পান করতে পারবে ।

৩। মায়ের স্তনের বোঁটা অক্ষত থাকবে । মা অনেক আরাম বোধ করবে এবং মায়ের বেশি বেশি দুধ তৈরি হবে।

৪। ভুল অবস্থান ও সংস্থাপনের ফলে মায়ের স্তনের বোঁটা ফেঁটে যায় । বোঁটার এই ফাঁটা অংশ দিয়ে রোগ জীবাণু প্রবেশ করে স্তনে ক্ষত /ঘাঁ /চুলকানি হয় । ফলে মায়ের স্তনের ব্যাথার কারণে শিশুর দুধ পান বিঘ্নিত হতে পারে ।

৫। সংস্থাপন ঠিক না হলে শিশুর পেটে দুধের চেয়ে বাতাস যাবে বেশী । ফলে শিশুর পেটে গ্যাস হবে ।

৬। শিশু দুধ কম পাবে ও কান্নাকাটি করবে ।

সঠিক অবস্থানের ৪ টি মূল তথ্যঃ

১। শিশুর মাথা মায়ের হাতের কনুইয়ের ভাঁজে এবং কোমরের নীচের অংশ বা পাছা মায়ের হাতের তালুতে থাকবে ।

২। শিশুর মাথা, ঘাড় এবং শরীর একই সরলরেখায় থাকবে এবং মা শিশুর সমস্ত শরীর ধরে থাকবে ।

৩। শিশুর পেট মায়ের শরীরের সাথে লেগে থাকবে।

৪। দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মুখ মায়ের স্তনের কাছে থাকবে ।

সঠিক সংস্থাপনের ৪ টি মূল তথ্যঃ

১। শিশুর মুখ বড় করে হাঁ করতে হবে ।

২। শিশুর থুতনি মায়ের স্তনে লেগে থাকবে।

৩। শিশুর নীচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো থাকবে ।

৪। মায়ের স্তনের কালো অংশ শিশুর মুখে প্রবেশ করানো থাকবে ( স্তনের উপরের কালো অংশ নীচের অংশের চেয়ে বেশী দেখা যাবে)।

মায়েদের পাশাপাশি পিতার ও দায়িত্ব রয়ে যায় সঠিক দুগ্ধপান নিশ্চিত করাতে।

সরকারি হাসপাতালে আইমসিআই কর্ণার(IMCI) থাকে সেখানে প্রসব পরবর্তী কাউন্সিলিং সেশনে দুগ্ধদানের সঠিক নিয়ম দেখিয়ে দেওয়া হয়। সেজন্য প্রসুতি মায়েদের প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিতে হবে।

আসুন সচেতন হই সঠিকভাবে শিশুকে দুগ্ধ পান করাইতে মা’কে সহায়তা করি। নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ শিশু গড়নে এগিয়ে আসুন।

লেখক :
ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন
নার্সিং কর্মকর্তা
জেলা সদর হাসপাতাল কক্সবাজার
ইমেইলঃ syedahmedtanshiruddin@gmail.com