রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এপিবিএনের বিশেষ ইউনিট

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ কক্সবাজার জেলাসহ উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তায় পুলিশের নতুন বিশেষায়িত ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ‘১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)’ নামের বিশেষায়িত এই ইউনিট সম্প্রতি কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ইউনিটের জনবল ৫৮৮।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। দিন দিন এদের একটা অংশ নিজেদের মধ্যে হানাহানি, অপহরণ, হত্যা ও মাদক ব্যবসার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বিপুলসংখ্যক এ রোহিঙ্গার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলেও তা রক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তায় এতদিন জেলা পুলিশ, ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ পুলিশের মাত্র দেড় হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাদের বড় একটি অংশকে ফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সফরকারী বিদেশি দাতা সংস্থা ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় ব্যস্ত থাকতে হতো।

এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন ইউনিটের যাত্রা শুরু হলো। ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হেমায়েতুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নতুন ইউনিট অনুমোদনের পর এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলা শহরের তিন কিলোমিটার দূরে দরিয়া এলাকায় ১৬ এপিবিএনের প্রধান কার্যালয় খোলা হয়েছে। অনুমোদিত জনবলের মধ্যে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পরিদর্শক, উপপরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক ও কনস্টেবল থেকে প্রায় সাড়ে ৪০০ জনবল নিয়োগ হয়েছে।

অধিনায়ক বলেন, ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নতুন ইউনিটের জন্য শিগগির অস্ত্র আসছে। এর পরই তারা ক্যাম্পগুলোতে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। এর আগে আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ১৬ এপিবিএনের জন্য একজন এসপি (অধিনায়ক), দু’জন অতিরিক্ত এসপি, চারজন এএসপি, নিরস্ত্র পরিদর্শক চারজন, সশস্ত্র পরিদর্শক পাঁচ, উপপরিদর্শক ৩১, সার্জেন্ট ২, এএসআই ৬০, নায়েক ২০, ৪৫০ জন কনস্টেবলসহ মোট ৫৮৮ জনবলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন এ ব্যাটালিয়নের জন্য একটি জিপ, দুটি পিকআপ, ৪০ সিটের একটি বাস, একটি ট্রাক, একটি এপিসি, একটি ওয়াটার ক্যানন ও ৪০টি মোটরসাইকেলেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক আগেই একাধিক বিশেষায়িত ইউনিট গঠন এবং ভিন্ন থানা ও একাধিক পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়া ও এ-সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য ক্যাম্প এলাকায় অস্থায়ী আদালত স্থাপনের প্রস্তাবনাও রয়েছে। তবে গত বছর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা ছিল। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও ছিল।

এজন্য টেকনাফ ও উখিয়া কেন্দ্রিক ক্যাম্পগুলো ঘিরে আগের নিরাপত্তা পরিকল্পনা কিছুটা থেমে যায়। কিন্তু প্রত্যাবাসন ও স্থানান্তর না হওয়ায় ক্যাম্পগুলো ঘিরে নতুন করে নিরাপত্তা কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দায়িত্বরত পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ক্যাম্পে বসবাসকারীদের বিশাল অংশ অলস সময় কাটাচ্ছে। যাদের বড় একটি অংশ নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।

ক্যাম্পের ভেতর নিজেদের মধ্যে হানাহানি ছাড়াও অপহরণ, হত্যা ও ইয়াবার মতো মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে তারা। এর বাইরে প্রত্যাবাসনের পক্ষে-বিপক্ষে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একাধিক গ্রুপ হত্যা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে গেছে, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রোহিঙ্গাদের অসহিষ্ণু আচরণ ও উগ্র মনোভাবের কারণে ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

ওই সূত্রগুলো বলছে, ক্যাম্পগুলোতে নিয়মিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নতুন নতুন অপরাধের সৃষ্টি হচ্ছে। এখনও কাঁটাতারের বেষ্টনী তৈরি সম্পন্ন না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের একটি অংশ পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে অবাধে যাতায়াত করছে।

বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ও রোহিঙ্গা নিহত হচ্ছে এবং নানা অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ ধরা পড়ছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ কার্যক্রম সার্বিকভাবে জেলার আইনশৃঙ্খলার ওপর প্রভাব ফেলছে। তবে ক্যাম্পগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশসহ দায়িত্বরত সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এপিবিএনের নতুন ইউনিটটি পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করলে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে।