মহেশখালীতে আত্মসমর্পণকারী ৪৩ জলদস্যুর জামিন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বিগত বছরের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে আত্মসমর্পণকারী ৪৩ জন জলদস্যু জামিন লাভ করেছে। বুধবার ৮ মে কক্সবাজারের জেলা ও দায়র জজ খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজ তাদেরকে জামিন প্রদান করেন।

মহেশখালী থানার মামলা নম্বর ০৮/২০১৯, যার জিআর মামলা নম্বর ২৪৬/২০১৮ (মহেশখালী) মামলা থেকে উদ্বুত পৃথক দু’টি ফৌজদারি মিচ মামলা নম্বর (১) ৪৪৪৬/২০১৮ নম্বর-এ ৩৭ জন এবং (২) ৮০৪/২০১৯ নম্বর মামলায় ৬ জনকে জামিন প্রদান করা হয়। বিষয়টি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালাতের পিপি এডভোকেট মমতাজ আহমেদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আব্বাস উদ্দিন ও আসামী পক্ষের ফাইলিং আইনজীবী এডভোকেট রবিউল এহেসান ও জামিনপ্রাপ্ত জলদস্যুদের মধ্যস্থতাকারী চ্যানেল-২৪ এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এম.এম আকরাম হোসাইন নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় শুনানীকালে রাষ্ট্রপক্ষে পিপি এডভোকেট মমতাজ আহমেদ, আসামীদের পক্ষে সাবেক পিপি এডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ, দায়েরকারী আইনজীবী এডভোকেট রবিউল এহেসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জামিনপ্রাপ্ত জলদস্যুদের বিরুদ্ধে ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইনে ১৯ (এ) ধারায় মহেশখালী থানায় দায়েরকৃত জিআর ২৪৬/২০১৯ নম্বর মূল মামলাটি প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছে।

আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রক্রিয়াটি শতভাগ সম্পন্ন হলে জলদস্যুরা এই মামলায় দায় হতে অব্যাহতি পাবে। সুত্রমতে, জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের শর্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রের একটি বাহিনীর পক্ষ থেকে দায়েরকৃত মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।

তাছাড়া বিগত সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি তাঁর বক্তব্যে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে তাদের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের উদ্যোগে লেঃ কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বিপিএম-বার,পিপিএম সেবা-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত মহেশখালী-কুতুবদিয়া অন্ঞ্চলের জলদস্যুদের উক্ত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে র‍্যাব ফোর্সেস-এর মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বিপিএম-বার বিশেষ অতিথি, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ৬ টি সশস্ত্র কুখ্যাত জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন সদস্য তাদের অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করেছিল। এই ৬ টি ভয়ংকর জলদস্যু বাহিনীর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ৫ টি বাহিনীর ৩৭ জন জলদস্যুই চ্যানেল-২৪ টিভি’র জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও পেকুয়া উপজেলার পূর্ব উজানটিয়ার কৃতি সন্তান এম.এম আকারাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

সাংবাদিক এম.এম আকরাম হোসাইন জানান-আগামী কিছুদিনের মধ্যে মহেশখালীতে আরো একদল জলদস্যুর ব্যাতিক্রমী আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া চলছে। আগে আত্মসমর্পণকৃত ৪৩ জন জলদস্যুকে পূণর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে গত ২৯ এপ্রিল মোট ৪৩ লাখ নগদ টাকা জলদস্যুদের নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের আরো বিভিন্নভাবে পূণর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সুত্রটি জানিয়েছে। সুত্রমতে, আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে যাতে তারা অভাব অনটনে সম্মুখীন হয়ে আবারো অপরাধকর্মে জড়িয়ে নাপড়ে সেজন্য জলদস্যুদের পর্যাপ্ত পূণর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণকৃত ৪৩ জলদস্যুর প্রত্যেকের বাড়ি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায়।

বুধবার জামিনপ্রাপ্ত জলদস্যুরা হলো-আনজু মিয়া, সুমন মিয়া, নুরুল মোস্তফা নাগু, মকসুদ মিয়া, মোনাফ মিয়া, মোবারক, মন্ঞ্জুর মিয়া, ছৈয়দ হোছন, নবাব মিয়া, ইমতিয়াজ উদ্দিন নকীব, রমিজ উদ্দিন সালেহ আহমেদ, ঈসমাইল, ওসমান, নুরুল আমিন, আবু তাহের, আবদুল মান্নান-১, মোস্তফা কামাল, আহমদ জামান, আবদুল মান্নান-২, রাশেদ, লোকমান, জয়নাল, শহীদুল্লাহ, বাদল, মাহবুব আলম, আতাউল্লাহ বাহারী, আবদুল মান্নান-৩, মোঃ জসিম, মোঃ রবিউল আলম, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ কামাল হোসেন, মোঃ রুবেল, মোঃ আবু তাহের-২, আনোয়ার পাশা, মোঃ ইউনুছ, আলাউদ্দিন সহ ৪৩ জন।