বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমারের পিয়াজের বাজার!

অনলাইন ডেস্ক ◑ এবার বাংলাদেশের পেঁয়াজ সিন্ডিকেট মিয়ানমারের পেঁয়াজের বাজারও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও টেকনাফ সীমান্তের সিন্ডিকেটই অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে। চট্টগ্রাম ও টেকনাফের সিন্ডিকেট সদস্যরাই মিয়ানমারের বন্দর শহর মংডুর সিন্ডিকেটের সাথে বাজার মূল্য নিয়ে সখ্য গড়ে তুলেছে। এমনকি চট্টগ্রাম ও টেকনাফের বেশ কিছু সংখ্যক সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বদেশের সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নাফনদের ওপারের মিয়ানমারের সিন্ডিকেট সদস্যদের পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর উস্কানি দেয়ারও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন গত বুধবার জানান-‘ বিষয়টি অত্যন্ত ষ্পর্শ কাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। তাই জরুরি ভাবে তদন্ত করে এরকম দেশ বিরোধী কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আকস্মিক মিয়ানমারের বন্দর শহর মংডুতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার পর পরই এপারের সিন্ডিকেট সদস্যদের ওপারে দাম বাড়ানোর উস্কানির বিষয়টি সীমান্ত এলাকায় চাওর হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম ও টেকনাফের কতিপয় সিন্ডিকেট সদস্য মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রেতাদের দাম বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় এমন ‘স্পর্শ কাতর’ বিষয়টিই এখন লোকেমুখে আলোচনা হচ্ছে।

গত বুধবার টেকনাফ ও মিয়ানমারের বন্দর শহর মংডুতে দফায় দফায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, দু’সপ্তাহ আগেও মিয়ানমারের মংডু শহরের বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল এক বিস্তায় (১৭৫০ গ্রাম) ১২০০ কিয়েত (মিয়ানমার মুদ্রা)। সেই হিসাবে বাংলাদেশী টাকায় প্রতি কেজির পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ টাকা। কিন্তু গতকাল বুধবার মিয়ানমারের মংডু শহরে পেঁয়াজের এক বিস্তার দাম ছিল ৩৪০০ কিয়েত ( বাংলাদেশী এক টাকার বিনিময়ে মিয়ানমারের ১৬ টাকা)। সেই হিসাবে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বিক্রি হয় বাংলাদেশী ১২০ টাকায়।
বুধবার টেকনাফ বন্দরে পেঁয়াজের বাজার ছিল কেজিতে ১৩০/১৪০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজের বাজারের সাথে টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাজারেরও কোন মিল নেই। অনেকেরই ধারণা, পেঁয়াজ নিয়ে এক ‘অজানা কাহিনী’ জড়িত রয়েছে। তবে সেই কাহিনীর সত্য চিত্র বরাবরই ঢাকা পড়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে পেঁয়াজের সঠিক দাম বাস্তবেই কেউ জানতে পারছে না। আর কেনইবা দাম এরকম সর্বত্র বাড়ছে তারও কোন বিশ্বাসযোগ্য কারন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালে টেকনাফ স্থল বন্দরটি চালু হবার পর থেকেই মিয়ানমারের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সিএন্ডএফ ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন বেশীর ভাগ বিএনপি দলীয় লোকজন। অনুরুপ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের বেশীর ভাগ লোকজনও বিএনপি দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত।
এদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কারসাজি করার অভিযোগে জড়িত রয়েছেন অন্তত ৪০ পেঁয়াজ ব্যবসায়ী। তাদের সিংহ ভাগই রয়েছেন কক্সবাজার ও টেকনাফের। পেঁয়াজ কারসাজির সঙ্গে জড়িত এসব হোতাদের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও শুল্ক গোয়েন্দার কাছে যেতে হচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দারা দেখবেন তাদের আমদানি ও বিক্রির নথি। এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্যবসায়ীকে তলবও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট ও পাইকাররা যোগসাজশ করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করেছে। ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য গোপন রাখতে তারা পেপারলেস মার্কেট তৈরি করেছে। অখ্যাত ৯০ ব্যবসায়ীকে সামনে রেখে এ মার্কেট চালু করা হয়েছিল। এরকম ৯০ জনের হদিস পাওয়া গেছে। আবার ১৩ জন ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্টের হদিসও মিলেছে যারা বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে। গোয়েন্দা সংস্থাকে এসব তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

টেকনাফের স্থল বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা আবসার উদ্দিন জানান, গত অক্টোবর থেকে সাড়ে তিন মাসে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানী করা হয়েছে। বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে সর্বোচ্চ পেঁয়াজ আমদানিকারক টেকনাফের এমএইচ ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ হাশেম এ বিষয়ে বলেন-‘ ‘দেশে আনা পেঁয়াজ ন্যূনতম লাভে বিক্রি করেছি আমরা। পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য হওয়ায় এখানে আমাদের লোকসানও অনেক বেশি। তার পরও কেন পেঁয়াজের দাম এতটা বেড়েছে, তা খতিয়ে দেখুক সরকার। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরাই পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি করছে।’

মিয়ানমারের শীর্ষ অপর পেঁয়াজ আমদানিকারক যদু চন্দ্র দাশ এর আগে বলেন, বাজার স্বাভাবিক রাখতে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। সে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় দেশেও দাম বেড়েছে। তিনি কোনো অন্যায় করেননি। অতিরিক্ত মুনাফাও করেননি।
আবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ ও মিয়াবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন-‘ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আমার কাছ থেকে কমিশন এজেন্টদের তালিকা চেয়েছিল। আমি ৫১ জনের তালিকা তাদের সরবরাহ করেছি। বাজার নিয়ে খেলেছে আমদানিকারকরা। তারা নামে-বেনামে পেঁয়াজ এনে ইচ্ছামতো বাজারে সরবরাহ করেছে। এখন আমাদেরও দোষ দিচ্ছে প্রশাসন। আমরা তো আমদানিকারকের বেঁধে দেওয়া দাম থেকে ৫০ পয়সা কমিশন নিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছি।’