প্রসঙ্গঃ কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

প্রস্তুতিতে টেকনাফ কিছুটা এগুলেও পিছিয়ে উখিয়া

শহীদুল্লাহ্ কায়সার ◑

আর কিছুদিন পর অর্থাৎ ২? ও ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের আগে চলতি বছরের (২০১৯ খ্রিঃ) ২১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ও রেল ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ওই সভাতেই কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। তাগাদা দেন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন আয়োজনের। এরপর থেকেই জেলা ব্যাপী শুরু হয়ে যায় সম্মেলনের প্রাক প্রস্তুতি।

সম্মেলন আয়োজনের অংশ হিসেবে জেলা নেতারা উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠানের দিকে নজর দেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ-সদস্য থেকে শুরু করে সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা জড়িয়ে পড়েছেন দ্বন্দ্বে। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। তারপরও এগিয়ে চলেছে সম্মেলনের প্রস্তুতি।

কক্সবাজার জেলায় আওয়ামী লীগের ৮টি উপজেলা, ১টি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা এবং ১টি সাংগঠনিক উপজেলা কমিটি রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে ইদগাঁও থানার মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সেটি এখনো কক্সবাজার সদর উপজেলার আওতাধীন। সাংগঠনিক থানার জন্য নেই কোন সাংগঠনিক উপজেলা কমিটি। উল্লিখিত উপজেলাগুলোর সম্মেলনের আগেই ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা হলেও এগিয়ে গিয়েছিলো দেশের সর্বদক্ষিণের উপজেলা টেকনাফ। এই উপজেলায় টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৬ টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং ১টি সাংগঠনকি ইউনিয়ন কমিটি রয়েছে। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের নাফ নদীর পাড়ের এই উপজেলায় আওয়ামী লীগ ত্রিধাবিভক্ত। বিষয়টি এখন আর গোপন নেই।

টেকনাফ উপজেলা সভাপতি, সাবেক সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ আলী (অধ্যাপক), সাবেক সংসদ-সদস্য আবদুর রহমান বদি এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর এই তিন রাজনীতিক তিন পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
যে কারণে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটি বাতিল ঘোষণা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।

উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ আলী (অধ্যাপক) ইতঃপূর্বে নিজ ক্ষমতাবলে হ্নীলা, এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পন্ন করেন। উপজেলা সাধারণ সম্পাদকে আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা কমিটি সেসব সম্মেলন অবৈধ ঘোষণা করেন। অন্যদিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সম্মেলনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু নির্বাচিত সভাপতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ সেই কমিটিও বাতিল ঘোষণা করেন।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ৩টি ইউনিয়নের সম্মেলন অবৈধ ঘোষণা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। তবে, উপজেলার ৭২টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন আমরা সম্পন্ন করেছি। যদি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। তাহলেই আমরা উপজেলা সম্মেলন সম্পন্ন করার দিকে অগ্রসর হবো।

টেকনাফ উপজেলা সম্মেলনের দিকে কিছুটা এগুলে এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে উখিয়া উপজেলা। একই সংসদীয় আসনের হলেও সম্মেলনের কোন আমেজই নেই এই উপজেলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে। উপজেলা কমিটি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন এমনকি প্রায় সব ওয়ার্ড কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। তারপরও এসব ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বের কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি। পাশাপাশি সাবেক সংসদ-সদস্য আবদুর রহমান বদিও চাইছেন নিজ সংসদীয় এলাকায় তাঁর পছন্দের নেতৃত্ব আসুক।

বিগত উপজেলা নির্বাচনের আগে সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী (অধ্যক্ষ) দলীয় পদ ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু এরপর আবারো এই পদে আসীন হন তিনি। সম্পর্কে চাচা-ভাইপো হলেও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সাথে রয়েছে তাঁর বিরোধ। যার রেশ পড়েছে উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে।

এই উপজেলায় রয়েছে আওয়ামী লীগের ৫টি ইউনিয়ন কমিটি। ২০১৫ সালের পর কোন ইউনিয়নেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনও হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। উপরন্তু উপজেলায় দুই যুগের অধিক সময় ধরে সম্মেলন হচ্ছে না এমন কয়েকটি ইউনিয়ন কমিটিও বর্তমানে রয়েছে। ৮ বছর আগে গঠিত রাজাপালং ইউনিয়নের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী। এরপর থেকে সভাপতি ছাড়াই এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলছে।

অন্যদিকে প্রায় ৩০ বছর ধরে হলদিয়া পালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ ইসলাম মেম্বার এবং ফজলুল করিম সিকদার। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয় রতœাপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন।