চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল আজ

স্পোর্টস ডেস্ক ◑ অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের সুবাস পাচ্ছে পিএসজি। তবে আজ রবিবার রাতে পর্তুগালের লিসবনে প্যারিসের দলটির বড় বাধা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ।

জার্মান ক্লাবটি এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে। তাই ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার দ্বারপ্রান্তে দলটি। কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যদেরকে অবশ্য এর আগে চোখ রাঙাচ্ছে পিএসজির রক্ষণাত্মক রেকর্ড। কেননা চলতি মৌসুমে সবচেয়ে কম গোল হজম করেছে থিয়াগো সিলভা-মারকিনিয়োসরা। সংগত কারণেই ফাইনালটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পিএসজির রক্ষণ আর বায়ার্ন আক্রমণভাগের লড়াইও।

প্রতিপক্ষ গোলমুখে বায়ার্ন মিউনিখের নির্মমতার ঝাঁজটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল বার্সেলোনা। ১৪ আগস্ট রাতে শেষ আটের লড়াইয়ে ব্যাভারিয়ানরাই যে কাতালানদের উপহার দিয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাবটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হারটি!

বার্সেলোনাকে আট-দুই গোলে হারানোর আগ থেকেই আগুনে ফর্মে বায়ার্নের আক্রমণভাগ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জিতেছে সবকটি ম্যাচেই, করেছে ৪২ গোল। পথে টটেনহ্যামকে তাদেরই মাঠে হারিয়েছে সাত-দুই ব্যবধানে। চেলসির বিপক্ষে শেষ ষোলোতেও দুই লেগে গোল করেছে সাতটি।

বায়ার্নের প্রধান গোলদাতা রবার্ট লেভান্ডোভস্কি আছেন দুরন্ত ফর্মে। গত শুক্রবার ৩২ এ পা দেওয়া এই ফরোয়ার্ড চলতি মৌসুমে গোল করেছেন ১৫টি। ফাইনালে হ্যাটট্রিক করলে ছাড়িয়ে যাবেন রোনালদোর এক মৌসুমে করা সর্বোচ্চ ১৭ গোলের রেকর্ডকেও। তার আক্রমণসঙ্গী সের্জ গেনাব্রিও আছেন দারুণ ছন্দে, করেছেন ৯ গোল।

আরো পড়ুন : ডি মারিয়ার স্মৃতিচারণ

এমন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হলে আর যাই হোক, রক্ষণ ভঙ্গুর হলে চলে না। পিএসজির রক্ষণ সেটা তো নয়ই, উলটো চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেরই সেরা। সব মিলিয়ে ছয় গোল হজম করা কোচ থমাস টুখেলের বিপক্ষে তাই বেশ কাঠখড়ই পোড়াতে হতে পারে বায়ার্নকে।

এদিকে পিএসজি কেবল রক্ষণকাজেই সিদ্ধহস্ত, ব্যাপারটা এমন নয় মোটেও। চলতি মৌসুমে ২৫ গোল করে জানান দিচ্ছে, কম যায় না তারাও। ছন্দে আছে নেইমার, কিলিয়ান এমবাপে, ডি মারিয়াদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগও। সবকিছু মিলিয়ে পিএসজিও নিজেদের ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের জোর সম্ভাবনাই দেখাচ্ছে।

এমন দলকে ‘নিখুঁত’ বলা ছাড়া উপায় দেখছেন না বায়ার্ন কিংবদন্তি কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে। বায়ার্নকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের খেলা দেখেছি, দারুণ পোক্ত এক দল তারা। দলটিতে কোনো খুঁত দেখছি না আমি।’

কোয়ার্টার আর সেমিফাইনালে বায়ার্নের রক্ষণভাগকে উঁচুতে তুলে রাখার কৌশল কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করলেও বড় পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। নেইমার, এমবাপেদের মতো গতিময় খেলোয়াড়দের মুখোমুখি হওয়ার আগে রক্ষণকেও প্রাধান্য না দিয়ে পারলেন না বায়ার্ন কোচ ফ্লিক। বললেন, ‘তাদের মুখোমুখি হওয়ার আগে রক্ষণ নিয়ে কিছু কাজ করেছি আমরা। তবে আমরা জানি আমাদেরকে নিজেদের শক্তিমত্তাতেই নির্ভর করতে হবে, যেটা হচ্ছে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা।’

সংখ্যায় সংখ্যায়

১প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পিএসজি। সর্বমোট ৪১তম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে অভিষেক হচ্ছে নেইমারদের। তবে দলটির জন্য দুঃসংবাদ, শেষ ছয়বার ফাইনালে অভিষিক্ত দলটিকে ফিরতে হয়েছিল রিক্ত হাতেই। সর্বশেষ প্রথমবারের মতো ফাইনালে আসা দলটি জিতেছিল ১৯৯৭ ফাইনালে, সেবার বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে হেরেছিল জুভেন্তাস।

২চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে বুন্ডেসলিগা, ডিএফবি পোকাল জেতা বায়ার্নের সামনে আজ হাতছানি ইতিহাসে দ্বিতীয় দল হিসেবে দুই বার মহাদেশীয় ত্রিমুকুট জয়ের। ২০০৮-০৯ আর ২০১৪-১৫ মৌসুমে সম্ভাব্য তিনটি বড় শিরোপা জিতে প্রথম দল হিসেবে এ কীর্তি গড়ে বার্সেলোনা।

৩সব মিলিয়ে পিএসজির এটি তৃতীয় ইউরোপিয়ান ফাইনাল। আগের দুইবার ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ ফাইনালে খেলেছিল দলটি। ১৯৯৫-৯৬ ফাইনালে র্যাপিড ভিয়েনার বিপক্ষে জিতেছিল ১-০ ব্যবধানে। পরের বছরের ফাইনালে একই ব্যবধানে হেরেছিল বার্সেলোনার কাছে।

৪আজ জিতলে চলতি মৌসুমে পিএসজির শিরোপা সংখ্যা দাঁড়াবে ৪-এ। এক মৌসুমে এমন কীর্তি নেই শীর্ষ পাঁচ লিগের আর কোনো দলেরই!

৯চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নবম বারের মতো মুখোমুখি পিএসজি-বায়ার্ন। এর আগে আট বারের দেখায় ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা জিতেছে পাঁচ বার, জার্মানদের জয় তিন ম্যাচে।

১১চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উপস্থিতি বায়ার্নের, ১১ বার। এর চেয়ে বেশি ফাইনাল খেলার কীর্তি আছে কেবল রিয়াল মাদ্রিদের (১৬)।