চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে পুলিশের ভাঙচুর ও লুটপাট, আহত-৮

এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া

কক্সবাজারের চকরিয়ায় যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে (মুক্তিযোদ্ধা কুঠির) ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে চকরিয়া থানার একদল পুলিশ।

এ সময় পুলিশ দলের সদস্যরা অশ্লিল ভাষায় গালিগালজ করে বাড়ির দেয়ালে টাঙ্গানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ভাঙচুর করে।

এছাড়া উৎশৃঙ্খল পুলিশ সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধার কুটিরের ছয়টি কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুরে পাশাপাশি তল্লাসীর নামে বাড়ির আলমিরা ভেঙ্গে ২০ ভরি ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ চার লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এসময় পুলিশের বেদড়ক পিটুনীতে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধু ও নাতী-নাতনীসহ আটজন আহত হয়। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের হামলায় আহতরা হলেন, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর স্ত্রী ও স্থানীয় লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম (৬০), ছেলে মুরাদুল করিম সিফাত (২৭), পুত্রবধূ ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিমের স্ত্রী শাহনা আক্তার শানু (৩০), ফরিদা ইয়াসমিন (৩২), ফাতেমা ইয়াসমিন (২৮), সাবাহ নুর তাবাহ (১৮), সৌদি প্রবাসী নাতি হাসান আবুল কালাম (২৩), নাতি আর্শেনুল করিম সুহা (৯) ও নাতি আনোয়ারুল মোস্তাফিজ শিহাব (১৪)। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত মুরাদুল ইসলাম সিফাতকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্যদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর স্ত্রী ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে আকস্মিকভাবে চকরিয়া থানার একদল পুলিশ আমাদের বাড়িতে (মুক্তিযোদ্ধা কুঠির) এসে প্রধান ফটকের গেইট বন্ধ করে দেয়। পরে তারা বাড়ির ঢুকে তল্লাসীর নামে ঘন্টাব্যাপী ব্যাপক ভাঙচুর ও তান্ডব চালায়।

এ সময় উৎশৃঙ্খল পুলিশ দলের সদস্যরা অশ্লিল ভাষায় গালিগালজ করে বাড়ির দেয়ালে টাঙ্গানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ভাঙচুরের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধার কুটিরের ছয়টি কক্ষের জানালা ও আসবাবপত্র ব্যাপক ভাঙচুর করে।

নেচারা বেগম আরও বলেন, তল্লাসীর নামে পুলিশ সদস্যরা বাড়ির আলমিরা ভেঙ্গে ২০ ভরি ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ চার লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা আমাকে, আমার ছেলে মুরাদুল ইসলাম সিফাকে ও আমার ছেলেদের স্ত্রী যথাক্রমে শাহনা আক্তার শানু ফরিদা ইয়াসমিন, ফাতেমা ইয়াসমিন, সাবাহ নুর তাবাহ এবং নাতী নাতি স্কুলছাত্র আনোয়ারুল মোস্তাফিজ শিহাব ও নাতনী আর্শেনুল করিম সুহাকে পিটিয়ে আহত করে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ছেলে মুরাদুল করিম সিফাতকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম বলেন, পরে পুলিশ আমার ছেলে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিমের স্ত্রী শাহনা আক্তার শানুকে আটক করে থানায় নিয়ে গেলেও পরে ছেড়ে দেয়।

যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর ছেলে এম কে মোহাম্মদ মিরাজ বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান, এস আই তুষ্ট লাল বিশ্বাস ও এএসআই জেট রহমানের নেতৃত্বে ২৫-৩০জন পুলিশ আমাদের বাড়িতে (মুক্তিযোদ্ধা কুঠির) ঢুকে ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালায়। এসময় পুলিশ আমার সদ্য বিবাহিত ছোটভাই মুরাদুল করিম সিফাতকে তার স্ত্রীর সামনে বেধড়ক পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। আমি এ নারকীয় ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ ওই এলাকায় একজন আসামীকে গ্রেপ্তারে অভিযানে গেলে আসামী পক্ষের লোকজন পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশ হামলাকারীদের খঁুজতে গিয়ে ভুল বুঝাবুঝি থেকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্য মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাথে অসদাচরণ করে। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে এ ঘটনার পর চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মোহাম্মদ মতিউল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফঁাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনসহ চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, কক্সবাজার জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদি আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে সংগঠিত এ ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। তিনি এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।