ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি, আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে ৪১০ মানুষ ও ৪৬ গবাদি পশু

ইমাম খাইর, কক্সবাজার
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১৯ মে) দিবাগত রাত ৯ টা পর্যন্ত ৪১০ জন লোক এবং ৪৬ টি গবাদি পশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

৭৪,৩৭৫ জন জেলে এবং ৫,৫০০টি মাছ ধরার নৌকা/ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, কক্সবাজার জেলায় বিদ্যমান ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিপদ সংকেত বাড়লে উপকূলীয় এলাকার জনগণকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ৫৭৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি আরো ২২১টি স্কুল কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।

উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে স্থানীয় সম্পদ, সিপিপি ও বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভলান্টিয়ারসহ জনবল ও স্থানীয় যানবাহন রিকুইজিশন করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সম্ভাব্য দুর্যোগ পরবর্তী তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ৪৬৫ মে.টন চাল, ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা জিআর ক্যাশ, ২ লাখ টাকা শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ অর্থ, ২ লাখ ,টাকা গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ অর্থ এবং ২ হাজার টি প্যাকেট শুকনো খাবারের বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। সমুদয় বরাদ্দ জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে উপজেলা/ পৌরসভাওয়ারী বিভাজন করে মঙ্গলবার (১৯ মে) সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে ছাড় করা হয়েছে। এ মুহুর্তে ২৬৫ মে.টন জিআর চাল, ১.১৬ লক্ষ টাকা, ১২২ বান্ডিল ঢেউটিন এবং ৫০০টি তাবু মজুদ রয়েছে।

উপজেলা পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী, উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জি.আর চাল, জি.আর ক্যাশ এবং শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ অর্থ মজুদ রয়েছে।

প্রতি দুটি উপজেলায় প্রস্তুতি, সম্ভাব্য উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিবীক্ষণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় থেকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় যথাযথ দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি ও সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

গত ১৬ ও ১৮ মে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

৪ নম্বর হুশিয়ারি সংকেত জারি হওয়ার সাথে সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং কক্সবাজার জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকারি বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সভা/পরামর্শ করা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা, ত্রাণ তৎপরতা, ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী কার্যক্রমে সর্বসাধারণের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।

এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ঠ ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ বর্তমানে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল হতে ৭৩০ কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক কক্সবাজার জেলায় ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বলবৎ আছে।