ক্ষমতার অন্দরমহলে করোনার আধিপত্য!

করোনাভাইরাস— যা জানে না সীমানা, যেখানে চর্চা নেই কোনো বিধি-নিষেধের। বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের বিচরণ কোথায় নেই? প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কবলে হার মেনেছে অগাধ ক্ষমতা আর সম্ভ্রম।

সম্প্রতি ইরানের পার্লেমেন্টের প্রায় ৮ শতাংশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ভাইরাসের কবলে বিশ্বে মারা গেছেন রাজনৈতিক-ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে প্রাক্তন কর্মকর্তারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা সেটা দেখার জন্য টেস্ট করেছিলেন। এর পেছনের গল্পটা আবার অন্যরকম ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারির সঙ্গে করমর্দনের কিছুদিন পরেই ওই সেক্রেটারির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। এর প্রেক্ষিতেই ট্রাম্প সময় ক্ষেপণ না করে নিজের করোনা টেস্ট সেরে ফেলেন। কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী”র করোনা টেস্ট পজিটিভ আসায় ১৪ দিনের জন্য সেলফ আইসোলেশনে চলে গিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন আসে এভাবে কতজন ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে এ ভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। যেটাকে বলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। বৈশ্বিক ক্ষমতার বিশাল অন্দরমহলে অতিকায় ক্ষুদ্র এ ভাইরাসের প্রবেশ কি নিয়ম মেনেই ছিল নাকি মৃত্যুর কাছে সব কিছু উপেক্ষিত এ বার্তা নিয়ে এসেছে করোনাভাইরাস।

বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ—

ইরানের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী

ইরানের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ইরাজ হারিরজি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ২৫ ফেব্রুয়ারি। আক্রান্ত হওয়ার পর এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। গতকাল রাতে আমার শরীরে জ্বর আসে। তারপর প্রাথমিক পরীক্ষায় আমার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর থেকে আমি নিজেকে আলাদা করে রেখেছি।

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ২১ মার্চ। পিটার ডাটন জানান, তিনি গায়ে তাপমাত্রা ও গলাব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কুইন্সল্যান্ডের স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ২১ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হন। যুক্তরাজ্যে এক অনুষ্ঠানের পর ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি খানিকটা অসুস্থ বোধ করেন। এরপর থেকেই ট্রুডো ও তার স্ত্রী স্বেচ্ছা আইসোলেশনে আছেন। তবে ট্রুডোর শরীরে করোনার লক্ষণ দেখা যায়নি।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

গত ২৭ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আক্রান্তের পর এক টুইটে তিনি লেখেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আমার শরীরে মৃদু উপসর্গ দেখা গেছে। কোভিড-১৯ টেস্ট পজেটিভ এসেছে। আমি নিজেকে আইসোলেশনে রেখেছি। তবে সরকারি কার্যক্রম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিচালনা করব। যেহেতু এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে।

ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস

ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ মার্চ। আক্রান্তের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রিন্স চার্লসের দেহে করোর মৃদু লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এছাড়া তার শারীরিক অবস্থা ভালো। তিনি ও তার স্ত্রী বর্তমানে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে সেল্ফ আইসোলেশনে আছেন।গত কয়েক দিন ধরে তারা বাড়িতে বসেই সব কাজ করছেন।

ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট

ইরানের নারী ও পরিবার কল্যাণবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসৌমেহ এবতেকার করনায় আক্রান্ত হন ২৮ ফেব্রুয়ারি। তার পরেই ইরানের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ইরাজ হারিরজি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

ইইউ’র কমিশনের প্রধান মাইকেল বার্নিয়ার

ইউরপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কমিশনের প্রধান আলোচক মাইকেল বার্নিয়ার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ মার্চ। এরপর এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, কোভিড-১৯ টেস্টে আমি পজিটিভ হয়েছি। বর্তমানে আমি সুস্থ আছি। চিকিৎসকদের নির্দেশনা আমি মেনে চলব। ইতিমধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছে ও আইসোলশনে রয়েছে সবাই একত্রিত হয়েছে রোগটির বিরুদ্ধে লড়ে যাব।

মোনাকোর রাজ্যমন্ত্রী

মোনাকোর রাজ্যমন্ত্রী সার্জ টেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ মার্চ। এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত কয়েকদিন ধরেই সার্জ টেলের শারীরিক গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পরীক্ষার রিপোর্টে তার দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে তিনি ভালো আছেন। ঘরে আইসোলেশনে আছেন।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী

স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেসের স্ত্রী বেগোনা গোমেজ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ মার্চ। এক বিবৃতিতে স্পেন সরকার জানিয়েছে, বেগোনা গোমেজ কোভিড-১৯ শনাক্তে পরীক্ষা করিয়েছেন। তার টেস্টে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। পেদ্রো সানচেজ ও তার স্ত্রী গোমেজ মাদ্রিদের সরকারি বাসভবনে রয়েছেন। তারা দুইজনেই ভালো আছেন। গোমেজ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করে চলছেন।

ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূতের মৃ্ত্যু

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানের কূটনীতিক ও সিরিয়ায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন শাইখলইসলাম মারা গেছেন ৫ মার্চ। এর আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির শীর্ষ উপদেষ্টা মোহাম্মদ মীর মোহাম্মদী (৭০) মারা যান। তার আগে ইরানের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী রামাজানি দাস্তাক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তির আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, ফিলিপাইন, নরওয়ে, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ আক্রান্ত হয়েছেন মরণঘাতী করোনাভাইরাসে।

সূত্র: ফরেন পলিসি