করোনাকালে রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া সেভলন বিক্রি হচ্ছে শহরের ফুটপাতে

ওমর ফারুক হিরু :
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এখনো চুড়ান্ত কোন প্রতিষেধক আবিস্কার না হওয়ায় প্রতিরোধকেই গুরুত্ব দিয়ে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি জীবানুমুক্তকরণ তরল সেভলন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার সহ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

এদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা (এনজিও) সেভলন সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করেছে। কিন্তু ব্যবহার করতে দেওয়া এই জিনিসগুলো দালালদের কাছে বিক্রি করছে রোহিঙ্গারা। দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফুটপাত সহ খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে করোনাকালে বাড়তি চাহিদা থাকা সেভলন সহ অন্যান্য জিনিস পত্র।

করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া ত্রাণ শহরের খোলাবাজার পর্যন্ত চলে আসার পেছনে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া ত্রাণ খোলা বাজারে বিক্রি হওয়ার পেছনে সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকটি দালাল সিন্ডিকেট। এতে শুধু বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃংখলার সৃষ্টি হবেনা বিমুখ হবে দাতা সংস্থাও।
মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ফজল মার্কেটের সম্মুখ এলাকায় ফুটপাতের উপরই উখিয়ার বাসিন্দা মো: রফিক নামে এক ব্যক্তি প্রায় ৩০০ এর অধিক সেভলন বিক্রি করছে। ক্রেতা সেজে তার কাছে জানতে গিয়ে জানা যায়, এসব সেভলন তিনি এনেছেন উখিয়ার বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে। দামের ক্ষেত্রেও ফার্মেসীর তুলনায় কম।

এক ফার্মেসী ওয়ালা নাকি তাকে ২০০ পিস অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। এই সেভলনগুলো কিভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আনা হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তারা অনেক সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে আবার কখনো উখিয়া গরু বাজারের পাশেই বামাইয়া মার্কেট থেকে ক্রয় করেন। এরপর যাত্রীবাহি বাসে করে কক্সবাজার শহরে চলে আসা আর বিক্রি করে পুনরায় চলে যায়। চেকপোস্টে ধরা হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অনেক সময় ধরা হয়। টাকা দিয়ে পার হয়ে চলে আসি। এইবারেও মরিচ্যা চেক পোস্টে ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে। এই ধরনের সেভলন আরো পাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে বলেন অর্ডার করলে এনে দেওয়া যাবে। তবে ১-২ দিন সময় দিতে হবে।

ক্যাম্প থেকে এসব মাল খোলা বাজারে আসার প্রসঙ্গে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি দালাল সিন্ডিকেট কাজ করে। যারা শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া ত্রাণের মাল অল্পমূল্যে ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। আর কমিশনের জন্য এই দালালদের সহযোগিতা করে আসছেন রোহিঙ্গা মাঝিরা। যারা ক্যাম্পের বিভিন্ন বøকের দায়িত্বে আছেন। এছাড়া এখন অনেক রোহিঙ্গা নিজে থেকেই দালালদের কাছে আসে ত্রাণের মাল বিক্রি করে।

এ ব্যাপারে সচেতন মহল জানান, রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মাল কক্সবাজার শহরের ফুটপাতে বিক্রি হওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়। চেকপোস্টগুলো যদি কঠোর হয় তাহলে কখনো এসব মাল শহরে যেতে পারেনা। এছাড়া ক্যাম্প ইনচার্জ সহ ক্যাম্পে আইনশৃংখলা রক্ষায় যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরও ব্যর্থতা রয়েছে। তারা যদি সঠিক দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে মাঝিদের মাধ্যমে এসব মাল কখনো দালালদের হাতে যেতে পারেনা। তাই প্রশাসনের সক্রিয়তা জরুরী হয়ে পড়েছে এই অনিয়ম বন্ধে। নয়ত দাতা সংস্থার বিমুখ সহ বাজার পরিস্থিতিতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে।