কক্সবাজারে স্কুলগুলোতে চলছে অতিরিক্ত ভর্তি বাণিজ্য

সাইফুল ইসলাম,কক্সবাজার জার্নাল ◑ 
কক্সবাজার শহরের বেসরকারী স্কুলগুলোতে অতিরিক্ত ফি আদায়, বই বানিজ্যেসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্নে ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। মান অনুসারে একেক স্কুলে একেক ধরণের ভর্তি নিয়ে নানা বানিজ্য চলছে প্রতিটি স্কুলে।

২ হাজার টাকার নিচে নার্সারীতেও ভর্তি করানো যাচ্ছে না এসব প্রতিষ্ঠানে। বিশেষ করে বেসরকারি কেজি স্কুলগুলোতেই চলছে সিন্ডিকেট করে এসব বানিজ্য।

প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই আদায় করা হচ্ছে শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত ফির তিনগুনের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা। ওই সব বেসরকারী স্কুলগুলোতে নার্সারী থেকে কেজি ফাইভ পর্যন্ত ভর্তি ফি নিচ্ছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার পর্যন্ত এবং ষষ্ট থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তি নিচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। পাশাপাশি বই ও পোশাক কেনায়ও সমান তালে চলছে কমিশন বাণিজ্য। তাতে জড়িত রয়েছে কিছু অসাধু চিহ্নিত শিক্ষক। ওই সব শিক্ষকের কারণে বেসরকারি স্কুলে পড়ানো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা হতাশায় পড়েছেন । এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারে শহরে বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা অর্ধ শতের বেশি। কিন্তু কক্সবাজার শহরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ডজনের বেশি নয়। শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ভাড়া ঘরের উপর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে এসব বেসরকারি স্কুল। এসব স্কুলে একদিকে চলছে ভর্তি বাণিজ্য, অন্যদিকে বই নিয়ে বাণিজ্যও। ভর্তি বাণিজ্য আবার একেক স্কুলে একেক ধরনের।

শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমীতে ষষ্ট শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ফি নেয়া হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ভাউচার দেয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকার। শহীদ তিতুমীর ইনিস্টিটিউটে কেজি প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। তৃতীয় শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত নিচ্ছেন ৪ হাজারের অধিক। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কেজি প্রথম থেকেই ভর্তি ফি নিচ্ছেন ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার পর্যন্ত। একই হারে ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে কলাতলীস্থ সৈকত কিন্ডার গার্টেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে আবার সানি বীচ ও ল্যাবরেটরি স্কুল ভর্তি ফি নিচ্ছেন আরো বেশি।

জানা যায়, এমনিতেই ভর্তি বাণিজ্য চলছে তার উপর আবার শিশুদের চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে পাঠ্যসূচীর বাইরের ঐচ্ছিক বই। কিন্তু কোমলমতি শিশুদের এসব ঐচ্ছিক বই নিয়েও চলছে স্কুলগুলোর গলাকাটা বাণিজ্য। ওই বেসরকারী স্কুলগুলোর সাথে লাইব্রেরীর একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। স্কুলের শিক্ষকেরাই বলে ওই লাইব্রেরীতে গেলেই সব বই পাওয়া যাবে। মাত্র একটি ২০ পৃষ্টার বইয়ের দাম ধরা হচ্ছে ১২০ টাকা।

অথচ প্রকাশকদের কাছ থেকে বই দোকানিরা এসব বই কেনে মাত্র ৩০টাকায়। লাভের অংশগুলো ভাগ বাটোয়ারা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বই দোকানের মালিকেরা। আবার লাভের হার প্রতিবছরই বাড়ানো হচ্ছে। স্কুলগুলোর সাথে লাইব্রেরী একটি চুক্তি থাকে। শুধু তাই নয়, স্কুলে নির্ধারিত পোষাক বা ইউনিফর্ম নিয়েও চলছে ভয়াবহ বাণিজ্য। টেইলার্স বা দর্জির দোকানের সাথে চুক্তি করে সেখান থেকেও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। এভাবে বেসরকারি স্কুলগুলোর চরম বাণিজ্যের কারণে নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে শিক্ষাদানের এ মহান পেশাটি।

এ বিষয়ে অনেকে অভিভাবকই বলেন, ‘অপর্যাপ্ত সরকারি স্কুল ও বিভিন্ন স্কুলে আসন না থাকায় অভিভাবকেরা বাধ্য হয়ে কেজি স্কুলসহ বেসরকারি স্কুলগুলোর দিকে ঝুঁকছে। এর সুযোগ নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বেসরকারি স্কুলগুলোর ফি আদায়ের বিষয়টি তদারকি করা দরকার। অন্যথায় অনেক অসচ্ছল পরিবারের সন্তান পড়া লেখা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। এবিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আমিন আল পারভেজ বলেন, বেসরকারী স্কুলগুলোর বিষয়ে এখনো নীতিমালা হয়নি। কিন্তু সরকারী স্কুলে কোন ভর্তি ফি নেই। তারপরেও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।