কক্সবাজারে রবিবার করোনায় আক্রান্ত হওয়া ৬৪ জন যে এলাকার

বিশেষ প্রতিবেদক ◑

কক্সবাজারে দিন দিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা, যতই দিন যাচ্ছে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।

তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে গত ২৪ ঘন্টায় দুই ডাক্তার,চার পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, এনজিও কর্মী,নার্স,২৪ দিনের শিশু সহ দ্বিতীয় সর্বেচ্চ ৬৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই কক্সবাজার পৌরসভার।

এর আগে গত শুক্রবার পৌরসভার দুই কাউন্সিলার সহ সর্বোচ্চ ৬৮জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে।

আর গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কক্সবাজারে এক মহিলা সহ ৭জন করোনা ও শ্বাসকষ্টে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া জেলা রাজনীতির জনপ্রিয় নেতা আওয়ামী লীগের সা: সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানও করোনার শিকার হয়েছেন।

এরই মধ্যে জেলায় আক্রান্তের দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে গেছে করোনার হটস্পট সদর উপজেলা। আর জেলার মধ্যে এর মধ্যে সদরের পৌরসভা এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। করোনাক্রান্তের সাথে সাথে বেড়েছে মৃত্যূর সংখ্যাও। সবমিলে সদরের সংখ্যা এখন ৩১৫ জন। যা জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ল্যাব সূত্রে জানা যায়,৩০ মে রবিবার পরীক্ষা করা ২৫৮টি নমুনার মধ্যে জেলায় ৬৪টির রিপোর্ট পজেটিভ আসে। আক্রান্তদের মধ্যে সর্বাধিক ৩৫ জন সদর উপজেলার, ১২জন উখিয়া উপজেলার, ১১ টেকনাফ উপজেলার, ২ জন রামুর, চকরিয়ার ২ জন, পেকুয়া ও মহেশখালীর ১ জন করে।

জানা গেছে, রবিবার সদরে যে ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ২৫ জনই কক্সবাজার পৌর এলাকার। আক্রান্তদের মধ্যে শহরের নুনিয়ারছড়ার ১৯,২৫ বছরের দুই ছাত্র ৩৫ বছরের এক নারী ও ৩২ বছরের এক পুরুষ সহ ৪ জন রয়েছেন। শহরের বিজিবি ক্যাম্পের ৫০ বছরের এক পুরুষ,শহরের কৃষি অফিস রোডের ৬৩ বছরের পুরুষ,যাদিরাম পাহাড়েরর ৫৩ বছরের পুরুষ, পেশকার পাড়ার ৬৮ বছরের পুরুষ, বার্মিজ স্কুল রোডের ৩২ বছরের যুবক,তারাবনিয়ার ছড়ার ১৮ ও ৫৫ বছরের পুরুষ,কালুর দোকানের ৫৬ পাহাড়তলির ৩৫ বছরের পুরুষ এবং ৫৭ বছরের মহিলা, সদর হাসপাতালের ৫০,৩৫,২৭ বছরের পুরুষ স্টাফ এবং ৩০ বছরের নারী ডাক্তার।

এছাড়া শহরের ৪০ বছরের চাকমা উপজাতি ও খুরুস্কুলে পালপাড়ায় ৫৫ বছরের বয়স্ক পুরুষ রয়েছে।সদরের ঈদগাঁওয়ের মধ্যে ২৬,২৭,২৬ ও ৩৬ বছরের ৪জন পুলিশ রয়েছে। এই ৩৫ জন নিয়ে সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ২২৩ জনে।যা জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। আর সুস্থ হয়েছেন ২২ জন এবং মৃত্যূবরণ করেছে ৯ জন।

টেকনাফ প্রতিনিধি জানায়,টেকনাফে গত ২৪ ঘন্টায় ১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরা হলো টেকনাফের পৌরসভায় ৩৮ বছরের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ৩২ ও ৩৫ বছরের দুই কনস্টেবল, সোনালী ব্যাংকের ৩০ ও ৩৮ বছরের কর্মকর্তা ও পৌর এলাকার ৩৪ বছরের এক পুরুষ রয়েছে।

এছাড়া বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত ২৫ বছরের মহিলা ও ৩১ বছরের পুরুষ রয়েছে।

উপজেলা কমপ্লেক্সে ৪৫ বছরের পুরুষ, পৌরসভার আলো রিসোর্টে ৩৩ বছরের আইওএমতে কর্মরত নারী, শামলাপুরে আইওএমতে কর্মরত ২৩ বছরের যুবক,বাহাড়ছড়ায় ৫০ বছরের পুরুষ ও ৩৫ বছরের নারী করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এনিয়ে এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ৩২ জনে।

উখিয়া প্রতিনিধি জানায়, উখিয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় ১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিভাগই এনজিওতে কর্মরতরা।

এমএমএফ এর ২৮ বছরের পুরুষ স্বাস্থ্যসহকারী, কুতুপালং ক্যাম্পের ২৫ ও ২৭ বছরের স্বাস্থ্যকর্মী, মধুরছড়ার ব্লক-১ ৫৫ বছরের রোহিঙ্গা, গোয়ালমারার ৩০ বছরের ডাক্তার,পালংখালীর আঞ্জমানপাড়ার ১২ বছরের কিশোর, এনজিওতে কর্মরত ৪৪ ও ৪৫ বছরের পুরুষ এবং উখিয়ার ২০ বছরের এক বড়ুয়া যুবক, ৪৫ ও ৩২ বছরের আরও দুই পুরুষ করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এনিয়ে এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ৯৮ জনে।এছাড়া এ উপজেলায় ৩১ রোহিঙ্গাও করোনা পজিটিভ রয়েছে।

রামু প্রতিনিধি জানায়,গত ২৪ ঘন্টায় রামুতে ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এ উপজেলায় ফলোআপ রোগীও রয়েছে। এদের মধ্যে চাবাগান স্টেশনের ৩৫ বছরের পুরুষ, রামু বাজারের ৪২ বছরের পুরুষ রয়েছে। এছাড়া ২৬,২৭ ও ৩৯ বছরের আরও তিনজন করোনা পজিটিভ রয়েছে। এনিয়ে এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ২৪ জনে।

মহেশখালী প্রতিনিধি জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় মহেশখালীতে শেখ আব্দুল হালিম নামে ৪৫ বছরের একজনের করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ৩২ জনে।

চকরিয়া প্রতিনিধি জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় এ উপজেলায় ৩৮ বছরের আইসোলেশন হাসপাতালের নারী কর্মকর্তা এবং শিকলঘাটার ৫৯ বছরের এক পুরুয়ের করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ১৫৭ জনে।

পেকুয়া প্রতিনিধি জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় এ উপজেলায় ২৪ দিনের এক শিশু করোনা শনাক্ত হয়েছে।এনিয়ে এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ৪০ জনে। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মো: ইউনুছ নামে ৫৫ বছরের পুরুষ পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা.মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, ৩১মে পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার কেরোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৪ জন।

বিভিন্ন হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রয়েছে ১০০ জন কভিড-১৯ রোগী। এছাড়া রোহিঙ্গা আইসোলেশন ইউনিটেও ৩৫ জন ভর্তি রয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৬২ জন।

হোম কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন ৩০৫জন। আর মারা গেছেন ১১ জন।