কক্সবাজারে মেগা প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অগ্রগতি

সৈয়দুল কাদের ◑
গত ৬ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কক্সবাজারকে ঘিরে নেয়া ২৫ মেগা উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে কক্সবাজার। এসব প্রকল্পের কাজের ব্যাপক অগ্রগতি হওয়ায় অধিকাংশ প্রকল্পই এখন দৃশ্যমান। কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দরের। বাস্তবায়ন হয়েছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি।

গত ৬ বছরে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের প্রায় প্রকল্পই আলোর মুখ দেখেছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার এখন কক্সবাজারকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বলতে গেলে কক্সবাজারকেই উন্নয়ন ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কক্সবাজারে উন্নয়নের জোয়ার শুরু হয়। শুধু কক্সবাজারেই ২৫টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জানান, প্রতিশ্রুতি নয়, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান লক্ষ্য। যেদিকেই তাকাই দেখা যাবে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আর কাজ।  বিগত সময়ে শুধু ফলক উম্মোচন করে মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে। এমন বোকা বানানোর রাজনীতিকে দেশ থেকে বিদায় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  সরকারের আন্তরিকতা থাকলে যেকোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় তা প্রমাণ কক্সবাজারে গৃহীত সব মেগা প্রকল্প।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর বাস্তবায়নে মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, কক্সবাজারের মানুষের একটি অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প। এই প্রকল্পটি সকল পর্যায় শেষ করে পুর্ণতা পেয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প আরো এক ধাপ এগিয়ে মাতারবাড়ির কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গৃহীত মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম। ইতোমধ্যে ওই মেগা প্রকল্পের ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দৃশ্যমান হচ্ছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন ও কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নিত করণের কাজ।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ‘মাতারবাড়ি তাপভিত্তিক কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এখন দৃশ্যমান। মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা মৌজায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে। প্রকল্পটির শুরুতে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও এখন তা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নিত হয়েছে।

এ ছাড়া এল.এন.জি ও কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মহেশখালী উপজেলার ৬টি মৌজা হোয়ানক, হেতালিয়া, কালারমারছড়া, হরিয়ারছড়া, পানিরছড়া, অমাবশ্যাখালীর ৫ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৯৫ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় একনেক।

এ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চূড়ান্ত হওয়ার পথে। মাতারবাড়িতে ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড নামে আরও একটি নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি মৌজায় ১ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়াও মহেশখালীতে স্থাপিত হচ্ছে ৫টি অর্থনৈতিক জোন। এগুলো হলো ১ হাজার ৭৮৪ একর জমির উপর ফ্রি ট্রেড জোন ১ হাজার ৪৩৮ একর জমির উপর মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন ১ ৮২৬ একর জমির উপর মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন ২ ৬৭০ একর জমির উপর মহেশখালী অর্থনৈতিক জোন ৩।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৬৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯০০০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তার মধ্যে ৪ হাজার ৪০৯টি ভূমিহীন পরিবারকে বাঁকখালী নদীর পূর্ব পাশের খুরুশকুল ইউনিয়নে পুনর্বাসন প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর উপর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০০ কোটি টাকা ও পুনর্বাসন প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য ২১০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

দৃশ্যমান হচ্ছে কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে কাজ।