কক্সবাজারে ভিক্ষুকদের দুর্দিন: সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেও মিলছেনা ভিক্ষা

শাহীন মাহমুদ রাসেল ◑

করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ঘর বন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারো বাড়িতেও যাচ্ছেন না। অনেকেই আবার বাড়ির বাইরে ঝুলিয়েছেন তালা। চলাচলের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না রিকশাভ্যান। প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কিন্তু এ পরিস্থিতির মধ্যে পেটের দায়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে পায়ে হেটে ভিক্ষার জন্য ছুটছেন অসহায় নারী-পুরুষ। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাড়ি বাড়ি ঘুরলেও তাদের কপালে ভিক্ষার সাহায্য মিলছে না। অনেক ভিক্ষুক নিদারুন কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শত শত ভিক্ষুক নারী-পুরুষ শহর ও বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্যের জন্য ভিড় করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কারণে তাদের কপালে ভিক্ষা মিলছে না। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাহায্য না পেয়ে নিরুপায় হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অনেক ভিক্ষুককে। অনেকেই আবার ভিক্ষুকদের সংস্পর্শে না আসতে ভিক্ষা না দিয়ে ফেরত দিচ্ছেন। ফলে দরজায় দীর্ঘ সময় ডাকাডাকির পর অনেক ভিক্ষুক ফেরত যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ভিক্ষা না পেয়ে দুর্দিনে পড়েছেন ভিক্ষুক সম্প্রদায়ের লোকজন।

সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ভিক্ষুক আয়েশা খাতুন (৬০) বলেন, আমার কথা কেউ শোনছেনা না। ভিক্ষা চাইলে বলে এখন নাই। পরে আসেন। বাড়ির ভেতর ঢুকার (প্রবেশ) দেয় না। ওই জন্যে আমরা ফাঁক ফাঁক (দূরত্ব) হয়ে দাঁড়ায়ছি। তাও ভিক্ষা মিলছেনা।

খরুলিয়া এলাকার নুরাইয়া (৭০)। করোনারভাইরাসের কারণে তার পরিবারের লোকজনের আয় রোজগার প্রায় বন্ধ। ভিক্ষার চালে তার সংসার চলে। পায়ে হেটে পৌরশহরে ভিক্ষার জন্য এসে হতাশ তিনি। নুরুর মতে, প্রতিদিন তিন থেকে চার কেজি করে ভিক্ষার চাল জুটতো। টাকা উঠতো প্রায় ৫০০। কিন্তু এখন চিত্র পাল্টে গেছে। নুরু বলেন, কিছুদিন আগেও মানুষ বাড়ির ভেতরে ডাক দিয়া ভাত খাওয়াইতো। কিন্তু এখন খাবার তো দূরের কথা। বাড়ি বাড়ি ঘুরি একজন যদি চাউল দিতে চায়, তা হলে বলে ফাঁক ফাঁক হয়া দাঁড়ান। আবার আমাদের জিজ্ঞাসা করে তোমার হাত কি পরিস্কার আছে।

এদিকে ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করতে প্রায় এক বছর আগে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এ যাবত ওই ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প আলোরমুখ দেখেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলা পরিষদের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা দেওয়া আছে ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাহায্য দিতে হবে। এজন্য ভিক্ষুকদের নামের তালিকা করে তাদের খাদ্য সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া আছে।