কক্সবাজারে কোরবানীর পশুর চাহিদা ৯৫ হাজার, মজুদ আছে ১ লাখ ৫৫০

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ জুলাই অথবা ১ আগষ্ট পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই সারাদেশের ন্যায় ইতোমধ্যে কক্সবাজারে শুরু হয়ে গেছে কুরবানীর পশুর হিসেব-নিকেশ।

তবে দেশে করোনা সংকটের কারণে পশু ক্রেতা বিক্রেতা সবার মাঝে চিন্তার ছাপ ফেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা খামারে গরু মোটাতাজা করণ অনেকটা শেষ পর্যায়ে।  তারা এখন শেষ মুহুর্তে গরুকে দেখতে ভালো লাগে মতো করার চেস্টা করছে। তবে সুসংবাদ দিয়েছে জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর। তাদের দাবী মতে এবার কক্সবাজার জেলায় কুরবানীর পশুর চাহিদা ৯৫ হাজার ১৮৮ টি। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কম। আর জেলায় স্থানীয় ভাবে মজুদ আছে ১ লাখ ৫৫০ টি পশু তাই কুরবানীর পশুর সংকট হবে না জানান এই দপ্তরের কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম জানান, দেশে চলমান করোনা সংকটের মধ্যেও ইতোমধ্যে কুরবানীর পশু নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্ম পরিকল্পনা চলছে। কক্সবাজার জেলার জন্য চলতি বছর কুরবানীর পশুর চাহিদা (গরু, ছাগল,  ভেড়া, মহিষ ) ইত্যাদি ৯৫ হাজার ১৮৮ টি । তবে আমরা আনন্দের সাথে জানাতে চাই কক্সবাজারে স্থানীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৫৫০ টি পশু মজুদ আছে। এটা যারা ২ টির বেশি গরু পালন করেছে এমন খামারীদের হিসাবে।

এছাড়া শুধুমাত্র ১টি গরু মোটাতাজা করেছে কোরবানীর বাজারে বিক্রির জন্য এরকম গরু কমপক্ষে ১৫ হাজার হবে, হয়তো আরো বেশি হতে পারে।  তবে একটা কথা আমরা দাবী নিয়ে বলতে পারি কুরবানীর জন্য পশুর সংকট হবে না। তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে চলতি বছর ৫৬ টি  কুরবানীর পশুর বাজার বসবে। পশুর রোগ বালাই দেখতে প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ২ টি মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে।
এদিকে কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে জেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে অনেকে গরু মোটাতাজা করেছে। তবে করোনা সংকটের করাণে মানুষের অর্থনৈতিক সঙ্গতি কমে যাওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী গরু বিক্রি হবে কিনা সে চিন্তায় পড়েছেন খামারীরা।

আলাপ কালে পিএমখালী ঘাটকুলিয়া পাড়ার শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন ,আমার নিজের ঘরে ২ টি গরু মোটাতাজা করেছি,আশা করছি এবারের কুরবানীর ঈদ বাজারে সেগুলো কমপক্ষে ৮০ হাজার টাকার উপরে প্রতিটি বিক্রি করবো। তবে এখন সমস্যা হচ্ছে গরুগুলো বেশি পাহারা দিতে হয় কারণ প্রতি বছর কুরবানীর সময় আসলে গরু চোরের দল বেড়ে যায়। আর একবার গরু চুরি হলে সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পিএমখালী ডিকপাড়া এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের ঘরে ৩টি গরু লালন পালন করেছি এছাড়া সম্প্রতি টেকনাফ থেকে আরো ৩ টি কিনেছি সেগুলো এখন ভাল করে পরিচর্যা করছি। আশা করছি কুরবানীর ঈদের বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকা বাড়তি আয় করতে পারবো। তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষের মুখে শুনা যাচ্ছে গরুর দাম পাওয়া কঠিন হবে কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। তাছাড়া এখন সব কিছুর দাম বাড়তি আগে গুরুর খাদ্য, ঔষধ, চিকিৎসা সব কিছু কমমূল্যে পাওয়া যেতো। কিন্ত এখন সব কিছুর দাম দ্বিগুন বা তিন গুণ হয়ে গেছে তাই গরু পালন করা খুব মুশকিল। এছাড়া আগে গ্রামে গঞ্জে ঘাষ বা বিলে গুরুর খাদ্য থাকত, এখন সে গুলো আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে ফলে গরু পালন করতে খরচ বেশি পড়ছে। চকরিয়া শাহারবিল এলাকার মৌলানা আবদুর রহমান বলেন, আমার ঘরে ৩টি গরু আছে যে গুলো গত বছর থেকে আমি কুরবানীর জন্য পরিচর্যা করে আসছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কারণে আদৌ গরু গুলো বিক্রি করতে পারবো কিনা কারণ কোন মানুষের মুখে শুনা যাচ্ছে না ভাল করে কোরবানী করতে পারবে।

এদিকে আসন্ন কুরবানীর ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক আজিম উদ্দিন বলেন, ঈদ মানে আনন্দ বিশেষ করে কুরবানীর ঈদের মুল আকর্ষণ পশু কিনে কোরবানী । তবে এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে রোজার ঈদেও কোন আনন্দ করতে পারেনি পরিবারের কেউ আর এবারও মনে হয়না আগের মত আনন্দ করতে পারবে। কারণ সবার ভেতরে আতংক বিরাজ করছে। আর ৪ মাস কর্মহীন হয়ে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
টেকপাড়ার ওসমান গনি পুতু বলেন, আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতাম। আমার এক ভাই করোনা পজিটিভ হওয়াতে অফিস থেকে ৩ মাস আগেই আমাকে অফিসে না পেতে বলে দিয়েছে এখন চুড়ান্ত ভাবে চাকরি চলে গেছে। ঠিকমত ৩ বেলা খেতে পারছিনা কোরবানী করবো কিভাবে। একই এলাকার শাহেদ বলেন, আমি একটি পরিবহণ কোম্পানীতে কাউন্টারে চাকরী করি ৭ মাস ধরে বেতন দিচ্ছে না। সে খাওয়া দাওয়া নিয়ে কষ্টে আছি কোরবানী কিভাবে করবো আগে কমপক্ষে ২ ভাগ কোরবানী দিতাম।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে অনলাইনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে যেটা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কুরবানীর পশুর বাজার যেন রাস্তার পাশে না বসে সেজন্য সব ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এবং আইনশৃংখলা বাহিনীকে এ বিষয়ে নজরদারী রাখার জন্য বলা হয়েছে। আর করোনা সংক্রামন এড়াতে বাজার গুলোতে স্বাস্থ্য বিধি কঠোর ভাবে পালন করার ব্যবস্থা করা হবে।