কক্সবাজারে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত লাশের পরিচয় মিলেছে

বলরাম দাশ অনুপম ◑

১০ দিন পর অবশেষে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া সওদাগরপাড়া থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত লাশের পরিচয় মিলেছে। ওই ব্যক্তির নাম মো. ইউনুছ (৩৮)।

তিনি রোহিঙ্গা নাগরিক। ইউনুছ উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৮ ব্লক (সি-ওয়ান) এর বাসিন্দা লাল মিয়ার ছেলে। পুলিশের প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ইয়াবা পাচারকে কেন্দ্র করে ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে।

গত ৩০ আগস্ট কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল তেতৈয়া সওদাগর পাড়া এলাকা থেকে একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর পুলিশ লাশ শনাক্তের জন্য বিভিন্ন থানায় চিঠি প্রেরণ করে। এদিকে নিহতের পরিবার বলছে— গত ২৮ আগস্ট (শুক্রবার) সকালে বাসা থেকে বের হন ইউনুছ। ওইদিন থেকে স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাননি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে অনলাইনে ছবি দেখে তার লাশ শনাক্ত করে।

পুলিশ জানায়, নিহত রোহিঙ্গা ইউনুছ উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প (৮ই ব্লক সি ওয়ান) এলাকার বাসিন্দা। তার স্ত্রীর নাম সৈকত আরা। তাদের পরিবারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি খুনের প্রাথমিক রহস্যও উদঘাটন হয়েছে।

পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তার দাবি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া রোহিঙ্গা নাগরিক ইউনুছ একজন মাদক কারবারি। তিনি পাশের ইউনিয়ন পিএমখালীতে ইয়াবার চালান নিয়ে এসেছিলেন। চালান লেনদেনের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। খুনের পর তার লাশ খুরুশকুলে ফেলে যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা (উপ-পরিদর্শক) থীতংকর দাশ বলেন, ‘নিহত রোহিঙ্গা ইউনুছের পরিচয় পেতে কক্সবাজারের ৮টি থানাসহ মোট ১৯টি থানায় অনুসন্ধান পত্র পাঠানো হয়। পরে ১০দিন পর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এই অজ্ঞাত লাশের পরিচয় পাওয়া যায়। তার রোহিঙ্গা আইডি ও পরিবারের সকল তথ্য পাওয়া গেছে। ’

নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে থীতংকর বলেন, ‘পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিখোঁজের দুই দিন পর ৩০ আগস্ট নিহত হন ইউনুছ। স্বজনরা নিহতের পরনে থাকা কাপড়ের আগের তোলা একটি ছবিও দেন। নিহত রোহিঙ্গা ইউনুছকে ইয়াবা পাচারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

কারা হত্যা করেছে, কেন হত্যা করা হয়েছে, ইয়াবার চালান লুট হয়েছে কিনা তা জানতে অধিকতর তদন্ত চলছে। শীঘ্রই খুনের আসল রহস্য বের হবে। ’

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া লাশের ১০ দিন পর পরিচয় মেলেছে। তিনি রোহিঙ্গা নাগরিক। তার মৃত্যুর রহস্যও পাওয়া গেছে। হত্যায় জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে স্থানীয়দের দেয়া খবরের ভিত্তিতে খুরুশকুল তৈতেয়া সওদাগর পাড়ার এলাকায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই আরিফ উল্লাহ।

তিনি এলাকাবাসীর সাথে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছিলেন। একই দিনে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি দাফন সম্পন্ন করেন। সেই সাথে অজ্ঞাতনামা আসামি করে এসআই আরিফ উল্লাহ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন ৩১ আগস্ট।

যার মামলা নম্বর ৪৮-৩১/৮/২০২০ ইং। যেখান থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছিল ওই এলাকার স্থানীয়রা দাবি করেন, এই ব্যক্তি ইয়াবা পাচারে জড়িত থাকতে পারে। না হয় উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে পিএমখালী-খুরুশকুল কেন আসবে? রোহিঙ্গা ইউনুছের সাথে এ এলাকার যাদের যোগাযোগ রয়েছে তারাই তাকে হত্যা করেছে।