কক্সবাজারকে পর্যটনবান্ধব করতে সরকারের মহাপরিকল্পনা

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ আর নোংরা পরিবেশের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

এর মধ্যে যানজটসহ সরু রাস্তায় মানুষের ভোগান্তি তো আছেই। তবে কক্সবাজারকে পর্যটনবান্ধব করতে এবার সরকার একটি মহাপরিকল্পনা সহ একগুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কে সাধারণ মানুষসহ পর্যটকদের চলাচল আরও সহজ ও ভোগান্তিমুক্ত হবে। এর আওতায় সৈকতের পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হলে নিরাপদে হাঁটতে পারবেন পর্যটকরা।

এছাড়া শহরের তিনটি বড় দীঘির সংস্কার হলে সেগুলো ঘিরেও সময় কাটাতে পারবেন পর্যটকরা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (চউক) এসব উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, কক্সবাজার ঘিরে সরকারের মহাপরিকল্পনার কাজ চলছে। কক্সবাজারকে বিশ্বমানের পর্যটননগরী করতে নানামুখী কাজে হাত দিয়েছি। কাজগুলো ধাপে ধাপে করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারি অন্য সংস্থাকেও প্রয়োজন অনুযায়ী যুক্ত করা হবে। আশা করছি কয়েক বছরের মধ্যে অনেকটাই দৃষ্টিনন্দন হবে পর্যটননগরী কক্সবাজার।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ একটি নতুন সংস্থা। সেখানে আমরা জনবল নিয়োগ করছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজে হাতও দিয়েছি। আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সব কিছু বাস্তবায়ন করতে পারলে কক্সবাজার বিশ্বের অন্যতম পরিকল্পিত একটি পর্যটননগরী হবে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু কক্সবাজার উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ একটি নতুন দপ্তর। তাই সরকারের অন্য দপ্তরের সহযোগিতা আমাদের খুব প্রয়োজন। আশা করি একটি বিশ্বমানের পর্যটননগরী গড়তে সবার সহযোগিতা পাওয়া যাবে।’

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের যানজট নিরসনে হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাস টার্মিনাল) রাস্তা সংস্কার, আলোকসজ্জাসহ প্রশস্তকরণে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

সরকারের অর্থায়নে ২৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হাতে নেওয়া এ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বাঁকখালী নদী সংলগ্ন ১৫০ ফুট প্রশস্ত সবুজ বেষ্টনী সহকারে বিকল্প সড়ক উন্নয়ন, কক্সবাজার শহরে যানজট নিরসনে সৈকত স্কুল গোল চত্বর-বিমানবন্দর সড়ক প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।

সেই সঙ্গে পর্যটন শহরের জন্য কেন্দ্রীয় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) স্থাপন, পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার জন্য সুগন্ধা মোড়-সুগন্ধা পয়েন্ট-লাবণী পয়েন্টসহ অভ্যন্তরীণ সড়কসমূহ প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধন, কক্সবাজারের রেজুখাল এলাকায় সি অ্যাকুরিয়াম নির্মাণেও কাজটি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি, গোলদীঘি, বাজারঘাটা পুকুরের সংস্কারসহ সৌন্দর্যবর্ধন নামে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পাড় বাঁধানো, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বসার স্থান, আলোকসজ্জা, সবুজ বেষ্টনী, স্ন্যাকস বারসহ পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা হবে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজারের খুরু স্কুল রোডে চৌফলদন্ডী ব্রিজ সংলগ্ন মুজিব ঘাটে একটি ওয়াটার পার্ক নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিভিন্ন সড়ক আলোকায়নে কার্বন নির্গমন হ্রাস ও পরিবেশ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইকো ফ্রেন্ডলি ওয়াকওয়ে নির্মাণ, জলবাযু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় কক্সবাজার বায়োডাইভার্সিটির ওপর জলবায়ু প্রভাব এবং সংরক্ষণ কৌশল ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

কর্মকর্তারা জানান, সমুদ্র তীরসংলগ্ন ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১০ ফুট চওড়া সাইকেল ওয়ে, ৬টি চেইঞ্জিং রুম, ৫টি অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স এবং পর্যাপ্তসংখ্যক গণশৌচাগারও নির্মাণ হবে পর্যটন শহরে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজার এলাকায় ইমারত নির্মাণের জন্য এতদিন বিশেষায়িত কোনো সংস্থা ছিল না। ফলে সেখানে অনেকটাই অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। তবে বর্তমানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ গঠনের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন (বিসি) কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

এ কমিটির আওতাধীন এলাকার ভবন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, পাহাড় কাটা, সমুদ্রসৈকতের পাশে আবাসিক, বাণিজ্যিক হোটেল/ভবন অথবা পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আইনে থাকা বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা বা বিশেষ পর্যটন অঞ্চল নিয়েও এ কমিটি কাজ করছে।