ইনানীতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর উপর মাদকাসক্ত স্বামীর অমানবিক নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক ◑

কক্সবাজারের উখিয়ার রিজিয়া আকতার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মাদকাসক্ত স্বামী ফরিদুল আলম ভুট্টোর বিরুদ্ধে।

গত শনিবার দুপুরে উপজেলার জালিয়াপালংয়ের ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নিদানীয়া গ্রামে এ অমানবিক ঘটনা ঘটে।

মাদকাসক্ত স্বামী ফরিদুলের ইয়াবা ব্যবসা ও সেবনে বাধা দিলে স্ত্রী রিজিয়ার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বেড়ধক মারধর করা হয়।

সোমবার উখিয়া হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ কথা জানান রিজিয়া আকতার। ৩ সন্তানের মা রিজিয়া আকতার একই ইউনিয়নের সোনারপাড়া গ্রামের শফিউল আলমের মেয়ে।

রিজিয়ার বাবা শফিউল আলম জানান, ১১ বছর আগে পারিবারিকভাবে ফরিদুলের সঙ্গে রিজিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল কিন্তু বিয়ের তিন বছরের মাথায় ফরিদুল হঠাৎ মাদকাসক্ত হয়ে উঠে এবং মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। তার এ অবৈধ ব্যবসা এবং মাদক সেবনে তাকে বাধা দিলে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। কিন্তু সে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনে বেপরোয়া হয়ে গেলে তাকে ভালোর পথে আনতে চেষ্টা করাতেই সে ব্যাপক মারধর করে স্বর্নালঙ্কার নিয়ে ফেলে পরে বিষয়টি আমরা জানতে পেরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে স্থানীয় বিচার শালিসির মাধ্যমে সে আর মাদক সেবন করবেনা, মাদক থেকে দূরে থাকবে এবং স্ত্রীকে আর কোন ভাবে নির্যাতন করবেনা এই মর্মে অঙ্গিকারনামা দেয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সে আবার নেশায় মত্ত হয়ে যায় এবং নির্যাতন শুরু করে। পরে তার বিরুদ্ধে আবারও ব্যবস্থা নিতে গেলে সে হাতে পায়ে পড়ে শপথ করে লিখিত স্ট্যাম্প জমা দেয়। আমরাও সে ভালো হয়ে যাবে এই আশায় তার ৩ সন্তানের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে আর নাতি-নাতনিকে তার হাতে তুলে দেই কিন্তু কুকুরের লেজ সোজা হবেনা সেটা জানতাম না। সর্বশেষ সে পবিত্র ঈদুল আযহার দিন রাতে নেশা করে এসে তার স্ত্রী ৪ মাসের অন্তসত্তা জেনেও হামলা চালিয়ে বুকে,পিঠে,মাথায় ও শরিরের অন্যান্য স্থানে মারাত্মক জখম করে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় আটকিয়ে রাখে।

পরে রিজিয়ার চিৎকারে স্থানীয়রা জানতে পেরে আমাদের খবর দিলে মেয়েকে উদ্ধারে গেলে তার বাড়ির লোকজন আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মারার জন্য তেড়ে আসে। পরে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উখিয়া হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসাধীন রিজিয়া আক্তার বলেন, ‘তার মাদক ব্যবসা ও সেবনের জন্য বাধা দিলে সে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে সংসার থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সে হাতে যা পায় তা দিয়েই আমার উপর হামলা করে। এমন অনেক সময় গেছে আমাকে বদ্ধ ঘরে আটকে রেখেছে। খাবার তো দূরের কথা পানিও খেতে দেইনি। এছাড়া তার মার সহ্য করতে না পেরে বাড়ির বাইরে গেলে সে স্থানীয় যুবক দিয়ে আটকে আমাকে মারধর করেছে। কিন্তু আমার ৩ সন্তানের জন্য আমি নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করি।

সর্বশেষ সে আমার উপর অমানবিকভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। সে আমার বুকে পিঠে এমনভাবে লাথি মেরেছে তাতে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তার হাতে আমি ও আমার সন্তানের জীবন নিরাপদ না। আমি প্রশাসনের কাছে তার এ কীর্তিকলাপের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, তার জন্য স্থানীয়ভাবে বিচার শালিস করা হয়েছে। সে ভালো হয়ে যাবে বলে অঙ্গিকার দিলেও পরবর্তীতে আবার নির্যাতন করে।

এ বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মরজিনা আক্তার মরজু বলেন, ‘স্বামীর নির্যাতনের ঘটনা শুনেছি। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’