আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার রায় আজ : ন্যায়বিচারের প্রার্থনা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের

ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ঘোষণা করবেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। মিয়ানমারের সরকার বারবার গণহত্যার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করে আসছে। দেশটির সর্বশেষ স্বাধীন তদন্ত প্যানেলের দেওয়া প্রতিবেদনেও রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধের বিষয় উঠে আসেনি। এ নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এখন তারা আইসিজের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের আশা, এই আদেশের মধ্য দিয়ে গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়টি প্রতিষ্ঠা পাবে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারে সরকারি তদন্ত কমিটি প্রমাণ না পেলেও জোনোসাইডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের কাছে। যা বিভিন্ন সময়ে আইসিজেসহ জাতিসংঘের একাধিক সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডের হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি হয়েছে।

ক্যাম্পভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বলেন ‘আইসিজের আদেশে রোহিঙ্গাদের জয় আশা করছি আমরা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার যথেষ্ট প্রমাণ আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে। মিয়ানমারের সেনারা যুগ যুগ ধরে আমাদের ওপর জেনোসাইড চালিয়ে আসছিল। যা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে বড় আকারে জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে।’

এআরএসপিএইচের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘গণহত্যার কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে মিয়ানমারের একটি তদন্ত প্যানেল, যা সর্ম্পূণ মিথ্যা। ১৪০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে আমাদের মা-বোনদের ওপর পরিচালিত নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার কোনও চিত্র উল্লেখ করা হয়নি। এটি শুধু নামে স্বাধীন তদন্ত প্যানেল। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার সরকারের কথা মত এই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যান করে নিজ দেশ থেকে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা জেনোসাইডের ঘটনা অনেক আগে থেকে ঘটিয়ে আসছিল। মিয়ানমার সরকার জেনোসাইডের ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করছে। যাতে করে সেনাবাহিনীকে রক্ষা করা যায়। এমনকি সরকার সেদেশে শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা আইন তৈরি করেছে। তাতে প্রমাণ হয় রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে সেদেশের সরকার আগের থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল। এছাড়া আইসিজেতে গাম্বিয়ার করা মামলা এটি প্রমাণ করে যে, সেদেশে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন।’

এদিকে আদেশ নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে কোনও বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি না হয় সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরও তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

তবে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী ও আদালতে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করা শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই বিষয়ে মামলা পরিচালনার এখতিয়ার জাতিসংঘের আদালতের নেই। গণহত্যার অভিযোগ খারিজ করতে বিচারককে তিনি আহ্বান জানান।