আত্মসমর্পণ ছিল আনুষ্ঠা‌নিকতা, মাদক ব্যবসা চলছে

যশোর • আড়াই বছর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন মাদক ব্যবসায়ী শিলি বেগম, শিউলি, আনু, ডালিমসহ অনেকেই। আর কখনো মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হবেন না বলেও শপথ করেছেন। কিন্তু সেই শপথ রাখেননি তারা। ফের যুক্ত হয়েছেন মাদক ব্যবসায়। যশোরের ‘মাদকপল্লী খ্যাত’ রায়পাড়া এলাকায় ইয়াবা ব্যবসাকে চাঙা করার চেষ্টায় আছেন তারা।
জেলা শহরের রেলগেট, রায়পাড়া, তুলোতলা ও আশপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ফের সক্রিয় হতে শুরু করেছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত। নতুন করে মাদকের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার কোনো সুযোগ নেই।

২০১৬ সালের শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় রায়পাড়ায় মাদকের কেনাবেচা বেশ কমে যায়। ২০১৭ সালের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় শান্তিশৃঙ্খলা কমিটি এ এলাকার কয়েকজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। তখন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বেবির চারটি বাড়ি, শিলি বেগমের একটি বাড়ি ভাঙা পড়ে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও চাপের মুখে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ যশোরের ৮৬৬ জন মাদক ব্যবসায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এছাড়া মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেবেন বলেও অঙ্গীকার করেন তারা। এরপর থেকে এ এলাকায় মাদকের কেনাবেচা কমে যায়। কিন্তু বছর ঘুরতেই সেই অঙ্গীকার থেকে সরে আসেন মাদক ব্যবসায়ীরা। শিলি বেগম, শিউলি, আনু, বেবি, ডালিমসহ অনেকেই ফের জড়িয়ে পড়েন পুরনো ব্যবসায়।

রায়পাড়া, রেলগেট, তুলোতলা এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ও চোরচালানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। নব্বইয়ের দশকে এ এলাকা পরিচিত ছিল চোরাই পথে আসা ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, চাদরসহ বিভিন্ন পণ্যের মার্কেট হিসেবে। পরবর্তীতে হেরোইন ও ফেনসিডিলের পরিচিতি লাভ করে রায়পাড়া। একপর্যায়ে মাদকপল্লী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে ওঠে এলাকাটি।

মাদক ব্যবসায়ীরা এখন ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির তৎপরতা শুরু করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে- রায়পাড়া কয়লাপট্টি এলাকার সোহেল মুহুরির বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুর রহিম ওরফে মুরগি রহিম, রহিমের বউ দুলারি, সোহরাব হোসেন ছোটর স্ত্রী শিলি বেগম, মজিবরের স্ত্রী মোটা জহুরা ও তার ছেলে রানা, করিমের ছেলে সবুজ ও মিন্টু, মিন্টুর স্ত্রী সীমা, মাদরাসা রোড এলাকার আম বাবুর ছেলে আব্দুর রশিদ, ইসরাফিলের ছেলে সন্ত্রাসী সজল, লিয়াকতের ছেলে রহমান ও পাখি, টাক জালালের ছেলে লাডল, বাদশার স্ত্রী রাণী, চাঁন গাজীর স্ত্রী বেবি খাতুন, মৃদুল, ডালিম, আসমা, মড়া, নাহার, রেলগেট পশ্চিম পাড়ার ঢাকাইয়া লিয়াকতের ছেলে সানু, আনু ও তার মেয়ে শিউলি, রেলগেট রেললাইনের পাশের বাসিন্দা নাজু, তুলোতলা এলাকার আরিফের ছেলে রমজান।

পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মাদক ব্যবসায়ী রহিম নকল ইয়াবা বিক্রি করছেন। শিলি, বেবি, আনু, শিউলি ইয়াবার বড় চালান নিয়ন্ত্রণ করেন। আর জোহুরা, রানা, আসমা, মড়া, নাহার ইয়াবার পাইকারি ব্যবসায়ী। এদের মাধ্যমেই খুচরা ব্যবসায়ীরা সেবীদের কাছে মাদক পৌঁছাচ্ছেন।

মাদক ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করলেও বসে নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বেবি এলাকায় ফিরে ব্যবসা শুরু করায় আবারো আটক হয়েছে। চলতি বছরের ৫ অক্টোবর পুলিশের অভিযানে আরো চার ব্যবসায়ীর সঙ্গে বেবি আটক হন। তার কাছ থেকে ১০৫টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

১৪ অক্টোবর ধরা পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়ী রশিদ। যদিও কিছুদিন পরই জামিনে মুক্তি পেয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এছাড়া আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন মিন্টু ও শিউলি।

যশোরের অ্যাডিশনাল এসপি (ক সার্কেল) গোলাম রব্বানী শেখ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই মাদক উদ্ধার, ব্যবসায়ী আটক ও মামলা হচ্ছে।

গোলাম রব্বানী আরো বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এ ব্যবসায় যেই জড়িত হোক না কেন, কেউ পার পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।